তপু রায়হান রাব্বি ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধিঃআজ ৯ই ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলা (তখন তারাকান্দা উপজেলা ফুলপুরের আওতায় ছিল)। ৭১’র যুদ্ধকালীন সময়ে ময়মনসিংহের ফুলপুরের সরচাপুরে বধ্যভূমিতে নিত্যদিন সন্ধ্যায় নেমে আসত হানাদার বাহিনীর বর্বরতা। মাঝে মধ্যেই নিরপরাধ অসংখ্য মানুষকে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে বেয়নেট চার্জ করে হত্যার পরে লাশ খরস্রোতা কংশ নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠতো তারা। কংশ নদীর পানি সেদিন রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। ফুলপুরের নীলগঞ্জ, মধ্যনগরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাক বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে ওঠেছিল। মিত্রবাহিনীসহ ফুলপুরের মুক্তিকামী মানুষ পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে এক পর্যায়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। হালুয়াঘাট মুক্ত হওয়ার পর পাক বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার সময় সরচাপুর ও ফুলপুর ব্রিজ গ্রেনেড মেরে ভেঙে দেয়। ৭১’র উত্তাল যুদ্ধের শুরু থেকে ফুলপুর মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত হানাদার বাহিনী উপজেলায় নিরপরাধ নারী পুরুষ ও শিশুদের উপর নির্বিচারে নির্যাতন চালায়। এ সময় ঘাতক দালাল রাজাকার আল বদরদের সহায়তায় রামসোনা গ্রামে ৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ ৫১ জন, পয়ারী গ্রামে চৌধুরী বাড়ির ১০ জন, বারইপাড়ার মা-পুত্র, ডাকুয়ার পিতাপুত্র, সরচাপুরের বধ্যভূমিতে অগণিত মানুষকে লোম হর্ষক হত্যাযজ্ঞ চালায়। বিশেষ করে মধ্যনগর, নীলগঞ্জ ও সরচাপুরের ইতিহাস আজও মুক্তিকামী বাঙ্গালীর গা শিউরে ওঠে। xasss#হানাদার বাহিনী ৮ ডিসেম্বর রাতে ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে গেলে ৯ ডিসেম্বরের ভোরের সোনালী সূর্য্য উদয়ের সাথে সাথে মুক্তির উল্লাসে ফুলপুর মুক্ত ঘোষণা করে স্বাধীনতার পতাকা উড্ডয়ন করা হয়। সরচাপুর-বাখাই-মধ্যনগর যুদ্ধে ফুলপুর থানা সদর মুক্ত হলেও আরো দু’টি যুদ্ধ করতে হয়েছে মুক্তি পাগল দামাল সেনানীদের। হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ সড়ক ধরে ময়মনসিংহ শহরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় কাকনী ও মধুপুর-রুপচন্দ্রপুরে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ হয় মুক্তি সেনানীদের। কোদালধর-রুপচন্দ্রপুর যুদ্ধে ৫৭ জন রাজাকার আটক এবং ৫৪টি অস্ত্র উদ্ধার করে এগিয়ে যায় ময়মনসিংহ শহর মুক্ত করার লক্ষে। শত্রু “মুক্ত হয় ফুলপুর। আকাশে ওড়ে বিজয় পতাকা। ফুলপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা প্রশাসন প্রতিবছর ৯ই ডিসেম্বর ফুলপুর মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।