মো: শাহাদাত হোসাইন শিমুল: বিগত রমজান মাসে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো মাস বন্ধ থাকার বিষয়টি ছুটির তালিকায় থাকলেও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ও পরবর্তীতে রীটের রায়ের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ সপ্তাহ (১০ কার্যদিবস ) অতিরিক্ত ক্লাস হয়েছে।
ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হওয়ার পর এক সপ্তাহ (৫ কার্যদিবস) দাবদাহের কারণে ছুটি থাকায় অতিরিক্ত ৫ কার্যদিবস শিক্ষার্থীরা ক্লাসের বাহিরে ছিলো এর ফলেই কি শিখন ঘাটতি হয়েছে? হয়ে থাকলে সেটা কিভাবে হয়েছে জানতে শিক্ষক সমাজ।
জাতীয় দিবস গুলো বন্ধের তালিকায় রাখা হয়েছে আবার নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী সে দিবস গুলো শিখনকালীন মূল্যায়নের অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে তাছাড়া সেদিন গুলোতে শিক্ষক- কর্মচারীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে নির্ধারিত অনুষ্ঠানসূচী ও পালন করতে হয় অর্থাৎ সেদিন গুলো কাগজে- কলমে বন্ধ থাকলেও শিক্ষকদের স্কুলে যেতে হয়। তাহলে কিসের শিখন ঘাটতির কারণে বিদ্যালয় অস্থায়ীভাবে শনিবার খোলা রাখা হচ্ছে?
এখন আবার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিছু জেলায় খোলা আবার দাবদাহে কিছু জেলায় বন্ধ রাখা হচ্ছে। এখন যে সকল জেলায় খোলা রাখা হচ্ছে আর যে সকল জেলায় বন্ধ রাখা হচ্ছে তা কর্তৃপক্ষ সমন্বয় করবে কী? নাকি কিছু জেলার ক্লাস ঘাটতির দ্বায় সকল জেলায় চাপিয়ে দেওয়া হবে? তাদের ও কি ক্লাস চালিয়ে যেতে হবে..?
এর ফলে, কোন জেলার শিক্ষার্থীরা কম আবার কোন জেলার শিক্ষার্থীরা বেশি কার্যদিবস শ্রেণিকার্যে থাকবে, এতেকরে কি শ্রেণিকার্যে বৈষম্য হবেনা? কেউ কম শিখতে পারবে আবার কেউ বেশি শিখতে পারবে এ টা কী সমীচীন হবে?
গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সন্মান জানিয়েছেন সেটা তিনি প্রেস ব্রিফিং এ বলছেন অথচ অধিদপ্তরের নির্দেশনা না পাওয়ার অযুহাতে অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগণ তার অধীনস্হ শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেছেন গত বৃহস্পতিবার।
(২রা মে) বিদ্যালয়ে আসতে ও ক্লাস করতে।
সেদিন শিক্ষক, কর্মচারীরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও করেছেন । আবার ইতিপূর্বে জারি কৃত কিছু জেলায় প্রচন্ড তাপ প্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়ার পরেও ঢাকাসহ সারাদেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খোলা ছিলো অর্থাৎ অধিদপ্তরের নির্দেশনা ও মানছেনা অনেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ …। আর নিয়ম ভাঙ্গার এই স্রোতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে নামি-দামি প্রাইভেট স্কুল কিংবা স্কুল এন্ড কলেজ গুলোই। কারণ উনারা সরকারী ভাতা বা সুবিধা গ্রহণ করেন না তাই হয়তো রাস্ট্রীয় আইন মানতে উনাদের এতো কার্পণ্য..! আর এ ক্ষেত্রে মনিটরিং এ নিয়োজিত কর্তারা ও কেন জানি নির্বাক…!
তাই কারা হাইকোর্ট মানবে , কারা মন্ত্রনালয় / অধিদপ্তর মানবে এমন দ্বিধায় মাধ্যমিক শিক্ষায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা.!
একটা দেশে মাধ্যমিক শিক্ষা এতো ভিন্নতায় কী চলতে পারে? কর্তৃপক্ষের নিকট এর সদুত্তর আছে কী? এতেকরে একেক জায়গায় একেক রকম অবস্থা, ভিন্নতা ও বৈষম্য বিরাজ করছে যা শিক্ষার মান উত্তোরণ ও নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের অন্তরায়।
কেউ নিয়ম মানে, কেউ মানেনা, কেউ খোলা রাখে, কেউ বন্ধ রাখে অথচ কর্তৃপক্ষ কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিলেও অনেকেই তা মানেনা ..।
শিক্ষক সমাজ ক্লাস করনো ও প্রতিষ্ঠানিক দায়িত্বপালনে অপারগ বা অনাগ্রহী নয় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকের পরিশ্রম ও ত্যাগের মূল্যায়ন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও তার অধীনস্হ দায়িত্বশীল গণ দিচ্ছে কী? যার ফলে মেধাবীসহ এই পেশায় উৎসর্গকারী শিক্ষকেরা হয়তো দিন দিন অপেশাদার ও অনাগ্রহী হয়ে যাবে। এতে শিক্ষার মঙ্গল হবেনা এবং সুযোগ সুবিধার স্বল্পতায় অনেকেই এই পেশা অচিরেই ত্যাগ করবে কিংবা এই পেশায় আসতে চাইবেনা।
এর পাশাপাশি কিছু প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতি বিদ্যালয়কে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনেকরে নিজের খাম খেয়ালির মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে । আর শিক্ষক সমাজ নিরীহ প্রাণীর মতো তা মেনে এবং সয়ে যাচ্ছে। এটিও অগ্রহণযোগ্য । মনে রাখতে হবে শিক্ষকরা কলুর বলদ নয়, উনারা রাস্ট্রের সবচেয়ে সন্মানিত পেশায় নিয়োজিত তাই তাদের আর্থিক, সামাজিক, ও প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
আর এভাবে চলতে থাকলে হয়তো নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন ও কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা অর্জন আকাশকুসুমই থাকবে।