স্টাফ রিপোর্টারঃ- লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে জমি বিক্রয় করার পর অন্যের প্ররোচনায় পড়ে বিক্রয়কৃত ওই জমির মালিকানা দাবি করে আলাউদ্দিন সবুজ নামের এক মৎস ব্যবসায়ীকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কুলসুম বেগমের বিরুদ্ধে। ব্যবসায়ী আলাউদ্দিনের অভিযোগ, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও স্থানীয় একটি প্রতিপক্ষের প্রত্যক্ষ মদদে জমি বিক্রেতা কুলসুম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তাকে আর্থিক ও মানুষিকভাবে হয়রানি করছেন। এমনকি ওই জমি থেকে তাকে উৎখাত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন। যে কারণে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। ভুক্তভোগী আলাউদ্দিন সবুজ উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাষ্টার ছায়েফউল্ল্যার ছেলে। তিনি স্থানীয় বাত্তিরখাল মাছ ঘাটের আড়তদার ও মৎস ব্যবসায়ী। অপরদিকে জমি বিক্রেতা কুলসুম বেগম একই উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়নের নাছিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় আবুল বাশারের স্ত্রী। ভুক্তভোগী আলাউদ্দিন সবুজ জানান, দুই বছর আগে মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙনের মুখে নাজিরগঞ্জ এলাকার অসংখ্য ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়, ওই সময় নদীর ভাঙন কুলসুম গংয়ের বসতভিটার ১০০ মিটারের কাছাকাছি চলে আসে, কুলসুম বেগম ভাঙনের মুখে থাকা বসতভিটা সহ ওয়ারিশ সম্পত্তির ৫০ শতক জমি বিক্রি করার চেষ্টা করলেও নিশ্চিত নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার কথা ভেবে ঝুঁকি নিয়ে কেউ কিনতে রাজি হননি। কুলসুমের অসহায়ত্ব ও অনুরোধের কারণে অনেকটা জুয়ার দানের মতো ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে ওই ৫০ শতক জমি ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় কিনে নেন আলাউদ্দিন। কুলসুম বেগম তার স্বামী বিদেশ থেকে দেশে আসলে জমির রেজিস্ট্রি করে দিবেন এ চুক্তিতে ৩০০ টাকা মুল্যের নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে লিখিত চুক্তি অনুযায়ী টাকাও বুঝে নেন। চুক্তি অনুযায়ী দু’পক্ষের উপস্থিতিতে আইনজীবীর মাধ্যমে স্টাম্প লিখে তা নোটারী পাবলিক করার পর কুলসুম বেগম, তার বোন ফাতেমা বেগম, বাবা হাজী সামছুল আলম, দুই ছেলে জিহাদ ও শিহাব স্টাম্পে স্বাক্ষর করেন। এরইমধ্যে বছর খানেক আগে মেঘনা নদীর ভাঙন রোধকল্পে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়। তিনি বলেন, কুলসুমের বিক্রিত ওই জমির কোল ঘেষে বেড়িবাঁধের কাজ চলমান থাকায় এখন জমি বিক্রি করার কথা অস্বীকার করছেন। এতে স্থানীয় কয়েকজন কুলসুমকে কুপরামর্শ দিয়ে তাকে দিয়ে এ মিথ্যা নাটক সাজিয়েছেন বলে জানান তিনি। রবিবার সরেজমিনে গেলে স্থানীয় ষাটোর্ধ বয়সী হাজী মো. ইউসুফ, সাইফুল্লাহ মাঝি, আবুতাহের মাঝি ও স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন সহ অন্তত ২০ জন ব্যক্তি জানান, দুই বছর আগে নদীতে ভাঙতে যাওয়া মুহুর্তে জমিটি বিক্রি করতে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকেন কুলসুম, এমনকি ৫০ শতক জমি ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করার জন্য অনেককে প্রস্তাবও দিয়েছে সে কেউ টাকা নদীতে ঢালতে রাজি হয়নি। অবশেষে অনেকটা বোকার মতো পকেটের টাকা নদীতে ফেলে দেওয়ার মতো ঝুকি নিয়ে আলাউদ্দিন সবুজ ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় জমিটি কিনেছেন, সম্প্রতি জমির কোল ঘেষে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় জমিটি ভাঙন থেকে টিকে গেছে এই লোভে পড়ে জমি বিক্রির কথা অস্বীকার করছে কুলসুম। তারা বলেন, স্টাম্পে লিখিত চুক্তি অনুযায়ী কুলসুম জমি কিনে অন্যত্র চলে যাওয়া পর্যন্ত তার বসতঘরটি ওই জমিতেই থাকবে এমনটা অনুরোধ করলে সরল মনে আলাউদ্দিন তা মেনে নেন। সে সুযোগে কুলসুম এখন বিক্রিত জমিটির মালিকানাই দাবি করে বসেছেন।তারা বলেন, স্থানীয় কতিপয় ব্যাক্তির ইন্ধনে পড়ে কুলসুম এখন প্রতারণা করছেন, প্রকৃতপক্ষে কুলসুমের থেকে আলাউদ্দিন সবুজ জমি কিনে নেওয়া সত্য ঘটনা, এছাড়া আলাউদ্দিন সবুজ একজন ভালো মানুষ। এদিকে, জমি বিক্রির চুক্তিপত্র সম্পাদিত স্টাম্পে এসব কথার সত্যতা পাওয়া গেছে। কুলসুমের চাচা সত্তরোর্ধ বয়সী শাহজাহান বলেন, ভাতিজি কুলসুম আলাউদ্দিনের কাছে জমি বিক্রির বিষয়টি সত্য, এখন কিছু লোকের শিখানো ইন্ধনে জমি বিক্রির কথা অস্বীকার করছে, বিষয়টি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে। এদিকে, জমি বিক্রির চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরকারী ও কুলসুমের পিতা হাজী সামছুল আলম জমি বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত কুলসুম বেগম জানান, টাকার প্রয়োজন হওয়ায় জমিটি আলাউদ্দিন সবুজের নিকট ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় বন্ধক (স্থানীয় ভাষায় কট) রেখেছি, কথা ছিল টাকা ফেরত দিলে জমি ছেড়ে দিবেন, এখন জমি না ছাড়ার কারণে স্টাম্প উদ্ধারের জন্য থানায় অভিযোগ করেছি। এলাকার শতশত মানুষ জানে আপনি জমিটি বিক্রি করেছেন, তাছাড়া লিখিত স্টাম্পে আপনি ও আপনার পিতা, দুই ছেলে ও বোন স্বাক্ষর করলেন কিভাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেননি তিনি। কমলনগর থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, এবিষয়ে কুলসুমের বেগম থানায় ষ্টাম্প উদ্ধারের বিষয়ে একটি অভিযোগ করেছেন, বিষয়টির প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা চলছে।