খুলনা জেলা প্রতিনিধি, খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাসারিতার অভিযোগ উঠেছে । চলমান বোরো সংগ্রহে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেছে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এই কর্মকর্তা। অগ্রিম রেট বেঁধে আদায় করছেন ঘুষের টাকা। ফলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট খাদ্য দপ্তরের উদ্ধতন কর্মকর্তা এবং দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ উঠেছে। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ায়। ছাত্র জীবনে তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ হল শাখার সম্পাদক ছিলেন । সেই সুবাদে অতি সহজেই বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।
রাজনীতি তদবীরে ৩১তম বিসিএস ক্যাডার নির্বাচিত হয়ে খাদ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগদানের সাথে সাথেই নানা অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন । তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে জুনিয়র হলেও সিনিয়রদের টপকিয়ে সুবিধাজনক জায়গায় পোস্টিং নিয়েছেন । তিনি নিজেকে সাবেক প্রধান মন্ত্রীর ফুফাতো ভাই পরিচয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করেছেন। ওই সময় বিভিন্ন তদবীর করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও এখনো পুরনো স্টাইলে দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছেন খুলনার ডিসি ফুড । চলমান বোরো সংগ্রহে খুলনা জেলায় ১০ হাজার টন ধান,২৫ হাজার টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা।
এতে পোয়া বারো অবস্থা তার। চুক্তির সময় মিলারদের চালে কেজি প্রতি ২০ পয়সা হারে ডিসি ফুডকে ঘুষ দিতে হয়। ডিসি ফুড অফিসের নুরে আলম এর মাধ্যমে নগদ অর্থ কালেকশন করেন। নগদ অর্থ পরিশোধ না করলে মিলের পাক্ষিক ক্ষমতা,উৎপাদন ও বিদ্যুৎ লাইনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ত্রুটির কথা বলে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমনকি চাহিদা মত টাকা না দিলে মিলের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেয়া হচ্ছে। মিলারদের কাছে চাওয়া হচ্ছে স্যাম্পল। অগ্রিম ঘুষের টাকা দিলে পণ্যের আর কোন সমস্যা বা ত্রুটি থাকছে না বলে একাধিক মিল মালিক অভিযোগ করেছেন। একই ভাবে ধান সংগ্রহে অনৈতিক সুবিধা নেওয়া হচ্ছে গুদাম ইনচার্জদের কাছ থেকে। জেলা খাদ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা এবং তার তত্ত্বাবধানে জেলার খাদ্য বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় বাধ্য হয়ে গুদাম ইনচার্জরা ওই অনৈতিক সুবিধা দিচ্ছেন।
সুত্র বলছে,এ বছর বোরো সংগ্রহ শতভাগ সফল করতে গুদাম ইনচার্জদের উপর খাদ্য অধিদপ্তর থেকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে । বিশেষ করে ধান ক্রয় করতে ব্যর্থ হলে গুদাম ইনচার্জদের বদলী করে দেয়া হচ্ছে। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন গুদাম ইনচার্জরা । ডিসি ফুডের অনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে তারা নাজেহাল । ঘুষের টাকা জোগাড় করতে অধিকাংশ গুদাম ইনচার্জ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বাইরে জেলা থেকে ট্রাকে করে অধিকাংশ গুদামে নিম্নমানের ধান আনা হচ্ছে। এতে প্রান্তিক কৃষকেরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। ধানের মহেশ্বর ঠিক থাকছে না।
অপ্রতিরোধ্য হয়ে ধান কিনছেন গুদাম ইনচার্জরা। তারা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। সুত্র বলছে,খুলনার অধিকাংশ খাদ্য গুদামে কেনা হচ্ছে নন সটিং চাল। বিশেষ করেবটিয়াঘাটা,ডুমুরিয়া,রুপসা ও ফুলতলা খাদ্য গুদামের কেনা ধান খুবই নিম্নমানের । শুধুমাত্র ডিসি ফুডকে অনৈতিক সুবিধা দিতেই ওসিএলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে । সুত্র বলছে,ডিসি ফুড খাদ্য অধিদপ্তরের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নিজস্ব ক্ষমতা বলে ধান মিলিংয়ের অনুমতি দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী আঞ্চলিক খাদ্য অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে ধান মিলিং করতে হবে।
কিন্তু আরসি ফুড অফিসের অনুমতি না নিয়ে বটিয়াঘাটা,ডুমুরিয়া,রুপসা ও ফুলতলাসহ একাধিক গুদামের ধান মিলিংয়ের অনুমতি দিয়েছেন ডিসি ফুড কাজী সাইফুদ্দিন। সুত্র বলছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাজ হচ্ছে খাদ্য শস্য সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রম তদারকি করা। কিন্তু জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিজেই দুর্নীতি ও অনিয়মের সুযোগ দিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায় করায় সমগ্র খাদ্য বিভাগে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। যে কারণে ক্ষোভ বাড়ছে ওসিএলএসডি ও মিলারদের মধ্যে। এখানেই শেষ নয়, গত ৪ আগষ্ট ডিসি ফুডের আওতাধীন মহানগরের ১৯টি ওয়ার্ডে খোলা বাজারে ট্রাকে সুলভ মূল্যের চাল-আটা বিতরণের তদারকি কর্মকর্তা (খাদ্য পরিদর্শক)ডেকে নির্দেশ দেন ৬আগষ্ট ৫০০ কেজি আটা বিতরণের।
বাকি ৫০০ কেজি আটার নগদ অর্থ ঘুষ হিসেবে রেখে দেন খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজি সাইফুদ্দিন। তিনি ডিসি ফুড অফিস থেকে গত ২ মাস আগে বদলি হওয়া সত্ত্বেও খাদ্য পরিদর্শক ঝুমুর দাসকে ডিসি ফুড অফিসে রেখে দিয়ে ঝুমুর দাসের সাথে গভির সম্পর্কে লিপ্ত রয়েছেন।ঝুমুর দাসকে খোলা বাজারে পণ্য বিতরণে মহনগরের ২ টি ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেয় এবং ঝুমুর দাস দায়িত্ব নিয়ে খোলা বাজারের পণ্য তিন ভাগের দুই ভাগ বাজারে বিক্রি করেন। এদিকে সাইফুদ্দিন ওএমএস এর মিলারদের কে গমের বরাদ্দ দিয়ে টন প্রতি ৫০০টাকা নিয়ে থাকেন।
সুত্র বলছে, আওয়ামীলীগ সরকার পরিবর্তনের পর বৈষম্য বিরোধী খাদ্য পরিবারের পক্ষ থেকে খুলনা বিভাগের ফ্যাসিস্ট এর দোসর উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টাসহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর থেকে যার তদন্ত চলমান রয়েছে । সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠেছে,ফ্যাসিস্ট এর দোসর খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের খুঁটির জোর কোথায়? এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নিই। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও কোন সাড়া মেলেনি।