পটিয়া( চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:-চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন আবেদীন কলোনির বাসিন্দা দিলরুবা বেগম পীপা (৩৫) হত্যা মামলায় জামিন পেয়েছেন স্বামী আব্দুল আলিম প্রকাশ আলম (৪৮)। এর আগে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন কর্ণফুলী থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এর বিচারক শুনানি শেষে আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট এসএম ফোরকান।গত বুধবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দীন।প্রতিবেদনে গৃহবধূ পীপার স্বামীর বিরুদ্ধে বাদি কতৃক আনিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তকালে পর্যাপ্ত ও প্রত্যক্ষ কোন সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ মামলায় গ্রেপ্তার (স্বামী) আব্দুল আলিম প্রকাশ আলম কে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে পুলিশ আরো জানায়, গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিটে পীপা সিএনজি অটোরিকশায় (চট্ট মেট্রো-থ-১২-৮১৬২) করে একা আবেদীন কলোনির বাসা থেকে বের হন। রাত ৮টা ৪ মিনিটে সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে নতুনব্রিজ টোলপ্লাজায় দেখা যায়। পরে কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক ইউটার্ন করে পুনরায় টোলপ্লাজায় আসেন। সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে সিএনজিতে একাই দেখা যায়।
এরপর রাত ৮টা ৩৬ মিনিটে একটি ফুটেজে দেখা যায়, নতুনব্রিজের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সেতুর রেলিং থেকে তিনি কর্ণফুলী নদীতে ঝাঁপ দেন। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাত ৮টা ২৮ মিনিটে একটি কল চলাকালীন মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। ময়নাতদন্তে নিশ্চিত করা হয়, পীপার মৃত্যু পানিতে ডুবে শ্বাসরোধজনিত শ্বাসকষ্টের কারণে ঘটেছে, যা আত্মহত্যা বলেই প্রতীয়মান।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, মোবাইল ফোনের তথ্য এবং সিএনজি চালকের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি থেকে নিশ্চিত হয়েছে যে, পীপা ব্যক্তিগত হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন। এই তদন্তের ভিত্তিতে স্বামী আব্দুল আলিমকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।তবে শুরুতেই পরিবারের দাবি ছিলো ভিন্ন। তাঁরা বলেছিলেন এটি হত্যাকাণ্ড এবং এর পেছনে তাঁর স্বামীর হাত রয়েছে। পীপার মরদেহ উদ্ধারের পরপরই ভিকটিমের ভাই তড়িগড়ি করে পীপার স্বামী আলিমকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার ভিত্তিতে আলিমকে গ্রেপ্তারও করেছিলেন।পীপার পরিবার সুত্র জানায়, পারিবারিক জীবনে কিছুটা টানাপোড়েন ছিল সংসারে। মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার হত্যার অভিযোগ তুললেও পুলিশের তদন্তে তা প্রমাণিত হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তদন্তে ময়নাতদন্ত এবং সিসিটিভি ফুটেজের তথ্যের ভিত্তিতে এটি আত্মহত্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা কর্ণফুলী থানার এসআই মুহাম্মদ আজিজুর রহমান প্রতিবেদনে জানান, মামলাটির সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ, সিডিআর, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, পিএম রিপোর্ট ও সিএনজি চালক এর স্বেচ্ছায় দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি পর্যালোচনা জানা যায় যে, ভিকটিম দিলরুবা বেগম ব্যক্তিগত কোন বিষয় নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে কর্ণফুলী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। ময়না তদন্তের রিপোর্টও একই তথ্য দিয়েছে এটি স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা।
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন, কর্ণফুলী জোনের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) মাহমুদুল হাসান, সিএমপি বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মুকুর চাকমা কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।তবে বন্দর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘আমরা পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই তদন্ত করেছি। এটি আত্মহত্যা বলেই প্রমাণিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন আবেদীন কলোনির বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন দিলরুবা বেগম পীপা। গত ২৭ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিনেও খোঁজ না পেয়ে গত ৩০ অক্টোবর সিএমপির কোতোয়ালী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি (জিডি) করেন স্বামী আবদুল আলীম প্রকাশ আলম (৪০)। তাঁর পরের দিনেই ৩১ অক্টোবর কর্ণফুলীর শিকলবাহা কালারপোল খাল থেকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেন পুলিশ।পহেলা নভেম্বর (শুক্রবার) বিকেলে ভিকটিমের ভাই সেলিম উল্লাহ বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যে মামলায় পীপার স্বামী ব্যবসায়ী আলম কে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে নেওয়া হয় দুই দিনের রিমান্ডেও। আলম পটিয়া পৌরসভার শামশুল আলম এর ছেলে। বর্তমানে নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন লাভ লেইন আবেদীন কলোনির ইপিক শিরিন ভবনে বসবাস করেন।জানা যায়, নগরীর পূর্ব বাকলিয়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আব্দুল লতিফ হাট আব্দুল্লাহ সওদাগর বাড়ির হাজী মো. মহসিনের মেয়ে দিলরুবা বেগম পীপার সাথে ২০১০ সালে আবদুল আলিম প্রকাশ আলমের বিয়ে হয়। তাঁদের ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে। আরশী আকতার (১৩) ও আজুয়া (৯)।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, শুরুতেই শিকলবাহা খালে পীপার লাশ পাবার পর সবার প্রশ্ন ছিলো এটি হত্যা, না আত্মহত্যা! মর্মান্তিক এই মৃত্যুকে ঘিরে নানা রহস্য ছিলো। যদিও কর্ণফুলী থানা পুলিশ নানা রহস্য ভেদ করে সত্য উদ্ঘাটনে ভূমিকা রাখেন।