নারায়ণগঞ্জের বন্দরে একের পর এক চুরি, জবরদখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইস্তিয়াক সিকদার ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংগঠন থেকে বাদ পড়ার পরও তিনি ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে এলাকায় দাপট দেখাচ্ছেন এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন।
৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকেই রাহিদ ইস্তিয়াক বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় আজমেরী ওসমান বাহিনীর সহযোগীদের আশ্রয় দিচ্ছেন। অতীতে ওই বাহিনীর কাছ থেকে আশ্রয় নেওয়া রাহিদ এখন নিজেই তাদের রক্ষাকবচ হয়ে উঠেছেন।
মাছ চুরির অভিযোগ
মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য রাসেল মাহমুদ জানান, সম্প্রতি তার লিজ নেওয়া একটি পুকুর থেকে রাহিদ ইস্তিয়াক ও তার সহযোগীরা প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মাছ তুলে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, “আমার ফুফাতো ভাই রেলওয়ের কাছ থেকে পুকুরটা লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছিলেন। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাহিদ স্থানীয় জাতীয় পার্টির সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে জাল ফেলে মাছ ধরে নিয়ে যায়। থানায় অভিযোগ করেও কোনো ব্যবস্থা পাইনি। পরে রাহিদের বাবার আশ্বাসে কিছুটা শান্ত হই, কিন্তু কয়েকদিন পর তারা আবার পুকুরে গিয়ে মাছ ধরতে শুরু করে।”
মারধর ও জবরদখল
কাইতাখালী এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ (৪৫) অভিযোগ করেছেন, সম্প্রতি রাহিদ সিকদার বাহিনী তাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করেছে। আহত অবস্থায় তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন।
এ ছাড়া আমিরাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন জানান, রাহিদ, আনিল সিকদার ও দিদারুল আলমসহ ৩০-৪০ জন মিলে তার ৬৫ শতাংশ জমি জবরদখলের চেষ্টা করছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
কুরবানির ঈদের সময় কাইতাখালী ঘাটে ট্রলারে গরু আনলোড করার সময় রাহিদ সিকদার ও তার সহযোগীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে গরু ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি ভিডিও করতে গেলে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়। তাদের মোবাইল, মানিব্যাগ, ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মারধর করা হয়।
পরে সাংবাদিকরা থানায় অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে মামলা হলেও পরে থানায় জোরপূর্বক আপসনামা নেওয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ
বন্দরজুড়ে এখনো আজমেরী ওসমানের প্রভাব বিস্তারে সিকদার পরিবার ভূমিকা রাখছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তারা বলছেন, সরকারের পরিবর্তনের পরও রাহিদ ইস্তিয়াকের ছত্রছায়ায় ঐসব সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি রাহিদ মোটরসাইকেল বহর নিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছেন এবং ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
রাহিদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি
রাহিদ ইস্তিয়াক সিকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয়দের মতামত
স্থানীয়দের দাবি, রাহিদ ইস্তিয়াক ছাত্রদলের ব্যানার ব্যবহার করে বন্দরের রাজনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেন। কেউ কেউ তাকে এখন “ছাত্রদলের অভিশাপ” বলেই আখ্যা দিচ্ছেন।