নিজস্ব প্রতিবেদকঃঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে এক সাংবাদিকের স্ত্রী অযথা টেস্টের শিকার হয়েছেন। চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই রেভিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে টেস্ট করাতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং তারিখ আনুমানিক রাত ১২ঘটিকার সময় ভুক্তভোগী সাংবাদিক দৈনিক বর্তমান দেশবাংলা পত্রিকার সহ-সম্পাদক মো. রায়হান আহমেদ ভূঁইয়া তার অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
ঘটনার বিবরণ: রায়হান আহাম্মেদের স্ত্রী তীব্র জ্বর, শরীর ব্যথা, হাত-পায়ে খিঁচুনি ও দুর্বলতায় ভুগছিলেন। টিকিট কেটে তারা মেডিসিন বিভাগে ৮০২ নম্বর কেবিনে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে যান। রোগীর প্রেসার মেপে ডাক্তার কোনো কারণ না জানিয়েই রেভিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাডে কিডনি টেস্ট লিখে দেন।
ডাক্তার টেস্ট লিখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাশে থাকা এক ব্যক্তি (রেভিভ সেন্টারের দালাল) বলেন, “ভাই, টেনশন কইরেন না, আমরা রিপোর্ট করে দিচ্ছি—৪৪০ টাকা দিন।”
সাংবাদিক রায়হান নিজের পরিচয় গোপন রেখে টেস্ট করান। তিনি প্রশ্ন করেন, “রোগীর তো জ্বর, হাত-পা ব্যথা—কিডনি টেস্টের প্রয়োজন কেন?” ডাক্তার জবাবে বলেন, “আপনি কিছুই বুঝবেন না। কিডনি টেস্ট করলেই সমস্যা ধরা পড়বে।”
সাংবাদিক পরামর্শ দেন ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া টেস্ট করার, কিন্তু চিকিৎসক জানান, “এগুলো দরকার নেই, রোগীর এসব সমস্যা নেই।”
এরপর রোগীর হাতে লাইন দেওয়ার সময় রেভিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মীরা হাসপাতালেই ব্লাড সংগ্রহ করে টেস্ট করে রিপোর্ট নিয়ে আসে। রিপোর্টে সব কিছু নরমাল দেখানো হয়। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বলেন,
“রোগীর কোনো সমস্যা নেই, বাসায় নিয়ে যান।”
কিন্তু তখনও রোগী খুব দুর্বল ছিলেন, কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। পরিবার জানায়, রোগী এখনও স্বাভাবিক নন, কিন্তু ডাক্তার তাতে গুরুত্ব দেননি।
এরপর সাংবাদিক রায়হান ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মীদের সঙ্গে গোপনে সাক্ষাৎকার রেকর্ড করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, দু্ইজন কর্মী বলেন,
“আমরা মামুন ভাইয়ের অধীনে কাজ করি। ডাক্তার যে টেস্ট দেন, আমরা রোগীর কাছ থেকে স্যাম্পল নিয়ে সেন্টারে পাঠাই। রোগীদের সরাসরি যেতে হয় না। আমরা কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করি।” তিনি আরও বলেন,
“এই টাকা নির্দিষ্ট কোডে জমা হয়, ডাক্তারদের কমিশনও সেইভাবে যায়।”
সাংবাদিক পরে রেভিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মামুন হোসেন–এর সঙ্গে কথা বলতে গেলে, তিনি প্রথমে কথা বলার আশ্বাস দিলেও পরে তিনি ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল এর মেইনরোডে এসে তখন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “হাসপাতালের ভেতরে থেকে দালালদের মাধ্যমে রোগীদের টেস্ট করানো কি বৈধ?” — কিন্তু মামুন কোনো উত্তর না দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে স্থান ত্যাগ করেন এবং ফোনে যোগাযোগের আশ্বাস দিয়েও পরে আর সাড়া দেননি।
পরবর্তীতে সাংবাদিক তার স্ত্রীকে নিয়ে ২৯-০৯-২০২৫ইং তারিখ রাত ৩ঘটিকার সময় ডাক্তার এর কথা অনুযায়ী বাসায় চেলে আসেন।
পরদিন, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং, তারিখে সাংবাদিক রায়হান তার স্ত্রীকে নারায়ণগঞ্জের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেডে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তার সহকারী অধ্যাপক. মাহবুব হাসান বাবু পূর্বের রিপোর্ট দেখে নতুন করে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া টেস্ট দেন।
১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে টেস্ট রিপোর্টে রোগীর ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটোই পজিটিভ আসে। অর্থাৎ, ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক ভুল টেস্ট দিয়েছেন, ফলে রোগ নির্ণয় বিলম্বিত হয়েছে।
চিকিৎসা সেবায় অনিয়মের অভিযোগ: এই ঘটনা প্রমাণ করে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিছু চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে কমিশনভিত্তিক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। এ ধরনের অনৈতিক বাণিজ্যের কারণে সাধারণ রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অনেকে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করাতে গিয়ে অর্থকষ্টে পড়ছেন এবং রোগ নির্ণয়ে দেরি হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অনিয়ম স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করছে এবং মৃত্যুহার বাড়াচ্ছে। হাসপাতাল প্রশাসনের দায়িত্ব হলো এসব সিন্ডিকেট ভেঙে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা।