নিজস্ব প্রতিবেদক
পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিবেশের ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার স্বার্থে লাইসেন্স ছাড়া। সব ধরনের গাছ কাটা ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। আইন অনুযায়ী, ব্যক্তি মালিকানায় লাগানো বড় গাছ কাটতেও সরকারের অনুমতি নিতে হয়। তবে চোরাকারবারিরা স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট, বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনুমোদন ছাড়াই প্রতিনিয়ত গাছ পাচার করে যাচ্ছে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের আজু খাইয়া এলাকায় বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া প্রায় ৫০একর বাগানের মধ্যে ৫ একরেরও বেশি গাছ কেটে পার্শ্ববর্তী করাতকলসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পাচারকারী একটি সিন্ডিকেট। কয়েকশ শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন দিনের বেলায় গাছ কেটে রাতের বেলায় পাচার করছে।
সরেজমিন দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ২৭১নং তুমব্রু মৌজার ২৯নং প্লট আজু খাইয়ার একটি বাগানে বেশ কিছু শ্রমিক দিয়ে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় বাগান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে রাতের বেলা নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী করাতকলসহ বিভিন্ন স্থানে।
স্থানীয়দের মতে, নাইক্ষ্যংছড়ি বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও রেজু বিট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে গাছকাটায় বাধা দেওয়া হলে আসে হুমকি বা মামলার ভয়। আবার পাচারকারীদের রয়েছে অনুমোদনবিহীন স’মিল।
স্থানীয়রা আরো জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তাদের জানানোর পরও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ঘটনাস্থলে না এসে বাগানের আশেপাশে ঘুরেফিরে চলে যায়। আর গাছ পাচার রোধে বন বিভাগ ও আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর নেই কোনো তৎপরতা।
স্থানীয়রা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক সরকার ও রেজু বিট কর্মকর্তার জোগসাজে পাচারকারী সিন্ডিকেটে রয়েছে জাহেদ আলম, জমির উদ্দিন, শাহাব উদ্দিন, আবুল কালামসহ আরো অনেক।
পাচারকারীরা প্রতিদিন দিনের বেলায় প্রকাশ্য বাগান থেকে গাছ কেটে জঙ্গলে মজুদ করে রেখে রাতের বেলায় পার্শ্ববর্তী স’মিল ও বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। অবৈধ কাঠ পাচারে বন বিভাগ জড়িত রয়েছে। সবার সম্পৃক্ততায় অবৈধভাবে কাঠ পাচার হচ্ছে। এভাবে অবৈধভাবে কাঠ পাচার হতে থাকলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবুল কালাম বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে ১০ থেকে ১৫টি গাড়ি অবৈধভাবে গাছ পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি বন বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলেও ঘটনাস্থলে না এসে মূল সড়ক থেকে ঘুরেফিরে চলে যায় তারা। আবার প্রশাসনকে অবহিত করার কারণে আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছেন পাছারকারীরা।
পাচারকারী সিন্ডিকেটের ভাই ওসি বাবুল আজাদের নির্দেশে এই বাগান কাটা হচ্ছে এবং বাধা দেওয়া হলে ভয় দেখানো হচ্ছে ওসি বাবুল আজাদের।’
নাইক্ষ্যংছড়ি বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক সরকার বলেন, ‘যারা গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই কাটছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে কিছু গাছ জব্দ করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ তার মতে, ‘একজন স্টাফ দিয়ে দুর্গম এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।’ এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘মামলাজনিত কারণে আমাকে বান্দরবান কোর্টে যেতে হয়েছে। তবে গাছ কাটার বিষয়টি জানার সাথে সাথে রেজু বিট কর্মকর্তাদের অবহিত করি এবং ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু গাছ জব্দ করা হয়েছে এবং মামলার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছু মালামাল জব্দ করা হয়েছে। তবে যে বাগান থেকে গাছ কাটা হয়েছে সে বাগানটি বন বিভাগের নয়। তবে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের আইন অনুযায়ী যে কোন গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়।’
বাগানে গাছ কাটার কোন ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়নি বিষয়টি স্বীকার করে লামা বিভাগীয় কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে কিছু কাটা গাছ জব্দ করা হয়েছে।’ বিট কর্মকর্তা ও নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে তারপরও এলাকায় যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের বলে দেওয়া হয়েছে। কিভাবে অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা হলো বিষয়টি তদন্ত করে দাষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এই বিষয়ে অভিযুক্ত জাহেদ আলমের কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করাই, তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।