নিজস্ব সংবাদদাতা: বিভিন্ন পত্রিকার কার্ড ব্যবহার করে সাংবাদিক পরিচয়ের অন্তরালে নারায়ণগঞ্জে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে বাবুরাইল তাঁতি পাড়া এলাকার সিরাজুল হক’র ছেলে সেলিম আহমেদ ডালিম। তার অপরাধ জগতের মূল শেল্টারদাতা ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এড. আলী আকবর। এই অপরাধী চক্রের অপরাধমূলক কাজের প্রতিবাদ করলে অথবা স্থানীয় সাংবাদিকরা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করলেই মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হয়। এই চক্রে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টের আরও কয়েকজন অসৎ আইনজীবী ও প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। ডালিম ও তার সঙ্গীয় শিরিন গংদের বিরুদ্ধে কয়েকজন ভুক্তভোগীদের মধ্য থেকে এমনটাই অভিযোগ উঠে এসেছে।
রবিবার (৩১ আগষ্ট) সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও র্যাব-১১ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন মোঃ মনির হোসেন দেওয়ান।
শহরের পাইকপাড়া দেওয়ান বাড়ির মৃত সোলেমান দেওয়ানের ছেলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোঃ মনির হোসেন দেওয়ান (৭০) অভিযোগের সুরে বলেন- বর্তমানে আমার সন্তান তামান্না দেওয়ান দোলা (২৭) একজন বখে যাওয়া, বিপথগামী নারী। আমরা তাকে এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করাই এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেই। সেই সংসারে তার তাশফিয়া (১০) নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সব কিছুই ভাল চলছিল। আমার এই কন্যাসন্তান ছিল অন্যান্য সন্তানদের মতই অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, নামাজি ও অত্যন্ত ভাল মানুষ। কিন্তু গত ৪ বছর আগে ২০২১ সালে হঠাৎ হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফেসবুকে খানপুর এলাকার মোঃ আলী’র বখে যাওয়া কন্যাসন্তান আসমা খাতুন শিরিন’র সাথে মাত্র ২ মাসের পরিচয়ের সূত্র ধরে দোলা’র মাঝে ব্যাপক আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করি। আমরা তখন স্থানীয় সংবাদকর্মী ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ও খানপুরের পোলস্টার ক্লাব কতৃপক্ষ সহ স্থানীয়দের থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করা এই দর্জি শিরিন নামের মেয়েটি একজন সমকামি।
এছাড়াও দেহ ব্যবসা, মাদক বিক্রি সহ নানা ধরনের অপরাধমূলক ও অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত। এবিষয়ে আমি আমার কন্যা সন্তানকে সতর্ক করলে, উল্টো সে ওই শিরিন’র প্ররোচনায় তার স্বামী-সন্তান ও আমাদের সবাইকে ত্যাগ করে শিরিন’র সাথে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। এবং অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িয়ে যায়। তার সঙ্গ হতে ফিরিয়ে আনতে বিগত ৭/৯/২০২১ইং ও ৯/৯/২০২১ইং তারিখে মেয়ের স্বামী মিজানুর রহমান ও আমি নিজে বাদি হয়ে ফতুল্লা থানায় পৃথক ২টি লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু তখন কোনোভাবেই মেয়েকে ফেরাতে পারিনা। বরং শিরিন গংদের এই চক্রের মূল হোতা স্বৈরাচারী সরকারের সাবেক এমপি শামীম ওসমান’র ভাবি এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমান’র মা পারভীন ওসমান ওরফে আম্মাজান এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এড. আলী আকবর ও তার ভাই সাংবাদিক পরিচয়দানকারী মাদক ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদ ডালিম’র প্ররোচনায় আমার কন্যা মাদকাসক্ত হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে আমি ও আমার পরিবার এবং আমার অন্যান্য সন্তানদের বিরুদ্ধে মানহানীকর বক্তব্য প্রদান করে। যার ফলে আমি অসহায় হয়ে ২১/৯/২০২১ইং তারিখে আদালতে হলফনামার মাধ্যমে আমি ও আমার স্ত্রী নাছিমা দেওয়ান (৫৬), তামান্না দেওয়ান দোলা’র সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে বাধ্য হই।
ভুক্তভোগী অসহায় বাবা বেদনা চিত্তে আরও বলেন- ত্যায্য করার পরও গত ৪টি বছর ধরে তারা বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সমাজের বিভিন্ন জনের কাছে আমার পরিবার ও আমার অন্যান্য সু-সন্তানদের নামে নানা ধরনের নোংরা ও অশ্লীল কথা ছড়িয়ে বেড়ায়। এমনকি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার পরিবারের সদস্যদের মিথ্যে মামলার আসামী বানিয়ে সামাজিকভাবে হেনস্থা করে যাচ্ছে। আমার বড় কন্যা সন্তান সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি একজন সৎ ও সাহসী নারী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী হিসেবে দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিত। দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি তার কর্মদক্ষতা ও সততার সাথে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সমাজের নানা অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় কলম ধরেছে। যার ফলে তার অনেক শত্রু থাকা আশ্চর্যের কিছু নয়। আমার ধারনা- সেই সকল অপরাধীদের চক্রান্তে তাকে সমাজে হেয় করতে এবং আমার অন্যান্য সু-সন্তানদেরকে সমাজে হেয় করতেই এই অপরাধী চক্র আমার বখে যাওয়া সন্তানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হেনস্থা করে যাচ্ছে।
এ-ই চক্রটির দ্বারা নারায়ণগঞ্জের অনেক পরিবার ও ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকতার কার্ড ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধী কার্যক্রম পরিচালনা করা এই চক্রটি এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে যারাই ইতিপূর্বে আওয়াজ তুলেছে, তাদেরকে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করা থেকে শুরু করে নানাভাবে তাদেরকে হেনস্থা করে যাচ্ছে। যার ফলে আইনী জটিলতা ও মান সম্মান হারানোর ভয়ে কেউ জনসম্মুখে এসে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। এই ধরনের বেশক’জন ভুক্তভোগিকে আমি ও আমার পরিবার সহ নারায়ণগঞ্জের অনেক স্থানীয় সাংবাদিক চেনেন ও জানেন।
মনির হোসেন দেওয়ান বলেন- আমি বিভিন্নজনের কাছে জানতে পেরেছি, এই ৪ বছরে আমার মাদকাসক্ত বখাটে সন্তান তামান্না দেওয়ান দোলা অন্যান্য অপরাধীদের সাথে সম্মিলিতভাবে সাংবাদিকতার পরিচয় বহন করে মাদক কেনা বেঁচার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। এবং নিজেও নিয়মিত মাদক সেবন করে। যা আপনারা তাদের সবার গতিবিধি লক্ষ্য রাখলে ও খোঁজ খবর নিলে জানতে পারবেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক ভুক্তভোগির দেয়া তথ্যমতে, এই চক্রটি অবৈধ পথে অর্জিত বিপুল পরিমান টাকায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে বিশাল অংকের টাকা জমা করা সহ একাধিক রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ও পরিবহন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলেও তাদের মূল উপার্জন মাদক বিক্রি, নারী ব্যবসা, মানুষকে ব্ল্যাকমেইলিং করে তাদের সর্বস্ব লুটে নেয়া সহ আরও অনেক অপরাধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের এই চক্রের সাথে আইন পেশা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন বেশকিছু অসৎ কর্মকর্তা সহ নারায়ণগঞ্জের একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসী জড়িত রয়েছেন। যাদের শেল্টারে এই অপরাধী চক্র সাধারণ মানুষের জীবন বিষিয়ে তুলছে। সম্প্রতি এ-ই ঘটনার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে ন্যায় বিচারের জন্য ১৪/০৮/২০২৫ইং তারিখে একটি মামলা দায়ের করা হয়ছে, যার মামলা নং- ১৯৫।
মনির হোসেন দেওয়ান সহ অন্যান্য ভুক্তভোগিরা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন- অতিসত্বর উল্লেখিত অপরাধীদের বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাদের ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার ও ব্যক্তিদ্বয়ের পাশে দাঁড়ান। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পরিবারগুলোর আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ থাকবে না। এবং তাদের অপরাধের রামরাজত্ব সুন্দর সমাজকে অপরাধ জগতে পরিণত করে তুলবে।