স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর:চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সোনারপাড়া গ্রামে নামজারী সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিরোধের জেরে হামলা, মারধর ও অর্থ ছিনতাইয়ের অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মান্নান খান সম্প্রতি একটি রিভিশন মামলার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করেন। তার দাবি, মতলব উত্তর সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের বিবিধ পুনঃবিচার মামলা নং ৪৬/২০২১-২০২২-এর ১৯ জুলাই ২০২৩ তারিখের আদেশ সম্পূর্ণ ভুলভাবে দেওয়া হয়েছে, যা বাতিল করা প্রয়োজন।
জানা যায়, মৌজা নতুনফালি, বিএস ৬১৯ দাগভুক্ত ০.১১ একর জমি আমি আমার আপন আত্মীয়ের কাছ থেকে বৈধভাবে হেবা দলিল (নং ৩৩১২/১৮, রেজিঃ ১৯/০৭/২০১৮) এর মাধ্যমে পেয়েছি। তখন থেকেই সেখানে ঘর তুলে বসবাস করছে মান্নান খান ও তার পরিবার শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষ সোলেমান বকাউল ও তার ছেলে ইমরান দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দখলের পাঁয়তারা করছে। এমনকি চার মাস আগে আদালতের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আমার ওপর হামলা চালানো হয়। পায়ে আঘাত পেয়ে হাঁটাচলা করতে কষ্ট হয় এখনও।
মান্নান খানের স্ত্রী রেশমা বেগম বলেন, আমরা কোন উপায়ান্তর না পেয় আইনের আশ্রয় নিয়েছি। তারা বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে আমাদের নানান নির্যাতন করেছে। আমরা আদালত থেকে ফেরার পথে সোলাইমান বকাউল ও তার ছেলে ইমরান আমাদের কে পথে আটকিয়ে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। ঐ সময় তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে আমাদের মামলাও দিতে দেয়নি তারা। কিন্তু প্রতিপক্ষ বারবার আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমার স্বামীর ওপর হামলার পরও থানায় মামলা নেওয়া হয়নি। এখন আবার আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এই জমি বিরোধেরই পরিপ্রেক্ষিতে মান্নান খানের ভাতিজা ইব্রাহীম (৩৫) মতলব উত্তর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, গত ১৮ জুন ২০২৫ ইং রাত ১টা ৩০ মিনিটে গনিয়ারপাড় এলাকায় প্রতিপক্ষ ইমরান বকাউল, তার সহযোগী লিটন, সুমন, মিজান ও কুদ্দুস মিলে ইব্রাহীম এবং তার মামা মান্নান খানকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ শুরু করে। প্রতিবাদ করায় মান্নান খানের ওপর হামলা চালানো হয় এবং তার পকেট থেকে ৩০,০০০ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এ সময় স্থানীয় সাক্ষীরা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করেন। প্রত্যক্ষদর্শী সুমন ব্যাপারী, মিজান মোল্লা ও জাকির গাজী জানান, আমরা না থাকলে হয়তো আরও বড় ঘটনা ঘটতো। পরিস্থিতি এখনো থমথমে।
ভুক্তভোগী ইব্রাহীম অভিযোগ করেন, ঘটনার পর সন্ধ্যায় অভিযুক্তরা আমাদের বাড়িতে গিয়েও হুমকি দিয়েছে এবং অপ্রীতিকর আচরণ করেছে। আমরা এখন পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ঘটনার পর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, আদালতের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে বলা হয়েছে। জবরদখলের কোনো চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। জমি সংক্রান্ত এই বিরোধকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য না আসলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক রয়েছে।