সঞ্জয় ব্যানার্জী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি।পটুয়াখালীতে চলমান তরমুজ আবাদ মৌসুমে তীব্র সার সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। প্রয়োজনীয় সারের ঘাটতির সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে সার বিক্রি করছেন। তবুও পর্যাপ্ত সার সংগ্রহ করতে পারছেন না কৃষকরা, যা এবারের তরমুজ উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।জানুয়ারি মাসে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলার জন্য ২০,২৪০ টন বিভিন্ন ধরনের সারের চাহিদা নির্ধারণ করলেও সরবরাহ হয়েছে মাত্র ৭,৩৭৩ টন। ফলে কৃষকরা প্রয়োজনীয় সারের জন্য বাজারে দ্বিগুণ দাম গুনছেন।চলতি মৌসুমে পটুয়াখালীর ৮টি উপজেলায় ২৩,৬০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৩,১৯৯ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে।গলাচিপা: ৮,৯৫০ হেক্টর (সর্বোচ্চ),রাঙ্গাবালী: ৬,৩৫০ হেক্টর,বাউফল: ৩,৫২০ হেক্টর,কলাপাড়া: ১,৭৫০ হেক্টর,দশমিনা: ১,৭২০ হেক্টর,সদর: ৮০৫ হেক্টর,দুমকি: ৩৫০ হেক্টর,মির্জাগঞ্জ: ১৫৫ হেক্টর। গত বছর এ জেলায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল।রাঙ্গাবালী উপজেলার চর নজিরের কৃষক হামিরুল হোসেন বলেন, “আমি এবার ২০ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করছি। প্রয়োজন ২০০ বস্তা সার, কিন্তু মাত্র ৫০ বস্তা পেয়েছি, তাও অতিরিক্ত দামে ইউরিয়া সার ১,৬০০ টাকা এবং টিএসপি ১,৯০০ টাকায় কিনেছি, যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি।”একই উপজেলার চর আগস্টির কৃষক হোসেন আকন ৯ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছেন। তার ১০০ বস্তা সার প্রয়োজন হলেও পেয়েছেন মাত্র ৬০ বস্তা।কলাপাড়া উপজেলার বানাতিপাড়ার কৃষক রুহুল আমিন জানান, “আমরা ১০ জন কৃষক মিলে ৫০ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করছি। ৫০০ বস্তা সারের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু পেয়েছি মাত্র ২০০ বস্তা। গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দোকানে ঘুরেও প্রয়োজনীয় সার সংগ্রহ করতে পারিনি।”
রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়ার সার ব্যবসায়ী কামাল পাশা বলেন, “তরমুজ চাষের জন্য বর্তমানে প্রচুর সারের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় আমরা চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছি না। গত সপ্তাহে ২০০ বস্তার চাহিদা দিলেও পেয়েছি মাত্র ২০ বস্তা।” তিনি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “চলতি জানুয়ারিতে ২০,২৪০ টন সারের চাহিদা দিলেও বরাদ্দ এসেছে মাত্র ৭,৩৭৩ টন। পটুয়াখালীতে সারের নিজস্ব গোডাউন না থাকায় ডিলারদের পাশের জেলা বরগুনা থেকে সার আনতে হয়। সংকট মোকাবিলায় বরগুনার পরিবর্তে বরিশাল থেকে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।” তিনি আরও বলেন, “কোনো ডিলার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কৃষকরা দ্রুত সারের সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে জেলার তরমুজ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।