তপু রায়হান রাব্বি ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ফুলপুরে বাস ও মাহিন্দ্রা অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। ময়মনসিংহ হাসপাতানে ৩ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিওতে ভর্তি আছে আরো একজন। এ ছাড়া তারাকান্দা উপজেলায় বিকালে সিএনজি ও এম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়। এ নিয়ে জেলার পৃথক দুই স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ১১ নিহত হয়েছে। গত ২০শে জুন শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট সড়কের ফুলপুর পৌরসভার কাজিয়াকান্দা ইন্দিরাপাড় এলাকায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনাস্থলে পাঁচজন, ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো দুজন মারা যান। এই আটজনের মধ্যে একজন নারী ও বাকিরা পুরুষ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শফিক উদ্দিন জানান, ফুলপুরে ওই সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বশেষ রাত সাড়ে ১১টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তিদের সবার পরিচয় শনাক্ত করেছে ফুলপুর থানার পুলিশ। তাঁরা হলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানার নিজগুড্ডিমারী গ্রামের মালেক শাহ ছেলে কাজিম উদ্দিন (২৮), হালুয়াঘাট উপজেলার জয়রামকুড়া গ্রামের আফাজের ছেলে রুবেল মিয়া (৩০), ফুলপুরের কাজিয়াকান্দা গ্রামের জসিমের ছেলে ফরিদ মিয়া (৩৮), নিগুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মইজের ছেলে জাহের আলী (৭০), বালিজুড়ি গ্রামের আঃ কুদ্দুসের মেয়ে হাছিনা খাতুন (৫০), কয়ারহাটি গ্রামের মৃত জবান আলীর ছেলে শামসুদ্দিন (৬৫), কালিয়ানিকান্দি গ্রামের আললা উদ্দিনের ছেলে নয়ন মিয়া (৪০) এবং পূর্বধলা উপজেলার ইসবপুর গ্রামের সিরাজুলের ছেলে লাল মিয়া (৩৬)।
অপর দিকে তারাকান্দার দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন—জেলার সদর উপজেলার কোরবান আলীর ছেলে আলম (৪০), ধোবাউড়ার মৃত আব্দুল বারেকের স্ত্রী জবেদা খাতুন (৮৫),আর একজনের ঠিকানা পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করে শনিবার সকালে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর হাদি বলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো তিনজন চিকিৎসাধীন। পরিবারগুলোর কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ইউএনও সাদিয়া ইসলাম সীমা বলেন, সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহতদের চিকিৎসার যেন কোন প্রকার বেঘাতে না ঘটে তাই হাসপাতালেও ছুটে যায়। হাসপাতালে গিয়ে একটু অনিয়ম পেলেও তাৎক্ষণিক আহতদের এ্যাম্বুলেন্সে করে ময়মনসিংহ রেফার করি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে। এমন একটি ভয়াবহ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মেনে নেওয়াটা খুবই কঠিন।
আমি পরিবারসহ সকলের খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার কাছ থেকে জানা যায়, বিকল হতে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বালু ভর্তি লরিকে ওভারটেক করতে গিয়ে যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রা ও শ্যামলী বাংলা (ঢাকা-মেট্রো-ব- ১৩-১০৫৯) বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। পরে পাশের বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা লেগে মাহিন্দ্রাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ড্রাইভার সহ ৫জন ফুলপুর হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন নিহত হন। বাসটি হালুয়াঘাট থেকে রাজধানী ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর মাহিন্দ্রাটি ছিল ফুলপুর থেকে হালুয়াঘাটগামী। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাসটির চালক ও তাঁর সহকারী পলাতক আছেন।
ফুলপুরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানান, সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক আহতদের উদ্ধার করে ফুলপুর হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং নিহতদের গাড়ি থেকে বের করে রাস্তার পাশে রাখি। পরে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দিলে সে আগুন নিভাতে গেলে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ওপর আঘাত করে। এতে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য আহত হয়। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি বিজয় ৭১ চ্যানেলকে বলেন, ওভারটেক ও ওভার স্পিডই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। সব বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে রাস্তায় গাড়ি চলাচলে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং নিয়মকানুন ও আইন মানতে হবে। এসব না মানার কারণে রাস্তায় দিনদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।