1. [email protected] : adminbackup :
  2. [email protected] : Gk Russel : Gk Russel
  3. [email protected] : stnews :
বাংলাদেশের বাস্তবতায় গণতন্ত্র কী এবং কেন?' এম এ আলীম সরকার - শিক্ষা তথ্য
বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাউলদের ওপর হামলা, ন্যক্কারজনক ঘটনা : মির্জা ফখরুল বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির দোয়া ও আলোচনা সভা বন্দরে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী নিউইয়র্ক নিউ হরাইজন লায়ন্স ক্লাবের অভিষেক হচ্ছে বিশ্ব বিখ্যাত ম্যারিয়টের বলরুমে ৬ই ডিসেম্বর, শনিবার! বাউল শিল্পীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিছেছেন বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি বাংলাদেশের বাস্তবতায় গণতন্ত্র কী এবং কেন?’ এম এ আলীম সরকার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের নবগঠিত কমিটিকে শুভেচ্ছা জানালেন সজিব হোসেন রায়পুরে মাদকচক্রে বড় ধাক্কা: উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে যুবকের জেল, জিরো টলারেন্স ঘোষণা ডেভিড’র অভাব আমরা জাতীয়তাবাদী দলে যারা বিশ্বাস করি, তারা হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছি গত ২১ বছর: মাসুদুজ্জামান মাসুদ নান্দাইলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের গণ সমাবেশ, প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা মামুনুল হক

বাংলাদেশের বাস্তবতায় গণতন্ত্র কী এবং কেন?’ এম এ আলীম সরকার

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৫ Time View

গণতন্ত্র একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে জনগণই শাসনের প্রকৃত উৎস। গণতন্ত্র (Democracy) শব্দটি গ্রিক ভাষার ‘Demos’ ( জনগণ) এবং ‘Krots’ (শাসন) শব্দ থেকে এসেছে। “গণ” অর্থ জনগণ এবং “তন্ত্র” অর্থ শাসন ব্যবস্থা। সুতরাং, গণতন্ত্র অর্থ জনগণের শাসন। এই ব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি অথবা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসনে অংশগ্রহণ করে। গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হলো: “জনগণের দ্বারা, জনগণের কল্যাণে , জনগণের শাসন।”

গণতন্ত্রের শিকড় প্রাচীন গ্রিসে, বিশেষ করে অ্যাথেন্স শহরে, খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে। সেখানে নাগরিকরা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নীতিনির্ধারণ করতেন। তবে আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয় ইংল্যান্ডে ১২১৫ সালে “ম্যাগনা কার্টা” ঘোষণার মাধ্যমে, যা রাজশক্তিকে সীমিত করে পার্লামেন্টের ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের বিস্তার ঘটায়। এ বিপ্লবগুলো “স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধ” এর ধারণাকে জনপ্রিয় করে তোলে।

গণতন্ত্র কেন প্রয়োজন?
গণতন্ত্র একটি ন্যায্য ও মানবিক শাসন ব্যবস্থা। এটি নাগরিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এবং শাসকের দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করে। গণতন্ত্রে নাগরিকরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার পরিবর্তনের সুযোগ পায়। এতে দুর্নীতি হ্রাস পায় এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্রের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন, অর্থনৈতিক অধিকার ও সংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করে।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা:
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭২ সালে রচিত হয় বাংলাদেশের সংবিধান। সংবিধানে গণতন্ত্র অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। ১৯৭২ সালে ১২ জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ওই নির্বাচনেও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে দারুণভাবে ব্যাহত করে। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারকে হত্যা করে সামরিক শাসনের অভিযাত্রা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সেনাবাহিনীর একটি অংশের সহায়তায় ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক আহমদ অঘোষিত রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন। ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ এর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে খন্দকার মোশতাক ও অন্যান্যদের হটিয়ে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৮ সালে বিএনপি গঠন করেন। ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হন। জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে ৩০ মে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন। জেনারেল জিয়াউর রহমান হত্যার পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ১৯৮১ সালে ২৪ মার্চ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হন। আরেক সামরিক শাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮১ সালে ২৪ মার্চ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সামরিক আইন জারি করেন এবং ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি গঠন করে ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন জয়ী হয়ে রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরোধী দলগুলো বর্জন করেন এবং ব্যাপক বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালে ৬ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এবং এরশাদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসনের অবসান হয়। সব দলের সমঝোতায় নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৯১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জয়ী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় গণভোটের মাধ্যমে। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরোধীদল বর্জন করলে একতরফা হয়। পরে খালেদা জিয়া গণ-আন্দোলনের মুখে ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০১ সালে ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৭ সালে জানুয়ারি রাজনৈতিক সংকট ও সহিংসতার কারণে ওয়ান-ইলেভেনে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হন ফখরুদ্দিন আহমদ। ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারবিহীন নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে দিয়ে আবারও টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। ২০২৪ সালে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি ও বিরোধীদল বর্জন করলে ডামি প্রার্থী নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। ২০২৪ সালে জুলাইতে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনার পতনের লক্ষ্যে একদফা দাবির আন্দোলনে পরিণত হয়। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। ৮ আগস্ট ২০২৪ সালে সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হন। বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে। ডক্টর ইউনুস ৫ আগস্ট ২০২৫ জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে ২৫টি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়। ডক্টর ইউনূস সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ২০২৬ সালে ফেব্রুয়ারি রমজানের আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। ডক্টর ইউনুসের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। ডক্টর ইউনুস জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে জনগণের ক্ষমতা জনগণের প্রতিনিধির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন, এটা জাতির প্রত্যাশা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৫৪ বছরেও কার্যত এখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আলোর মুখ দেখেনি। এজন্য এদেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক দলসমূহ ও নেতৃত্ব প্রধানত দায়ী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে দুইবার অসাংবিধানিক এবং দুইবার সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু-একটি ব্যতিত প্রতিটি নির্বাচনই কমবেশি বিতর্কিত হয়েছে। বিরোধীদল কোনো নির্বাচনই সঠিক হয়েছে বলে মেনে নেয়নি। আমরা মনে করি, রাষ্ট্র সংস্কারের চেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের সংস্কার।

বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে যে গণতন্ত্র চলছে, তা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের উদার গণতন্ত্র। উদার গণতন্ত্র ৫% লোকের জন্য প্রযোজ্য। এই ৫% লোক সারা বিশ্বে ৯৫% জনগণের রক্ত চুষে খাচ্ছে। যার ফলে সমাজে, রাষ্ট্রে দিনে দিনে শ্রেণীবৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরীবরা আরও গরীব হচ্ছে, আর ধনীকরা আরও ধনী হচ্ছে। একশ্রেণী মানুষের কাছে সম্পদের পাহাড় জমেছে। স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর আমরা সাধারণ মানুষ জানতে পারি, পতিত সরকারের দোসররা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সুইজ ব্যাংক সহ বিদেশে সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে। কানাডার বেগমপাড়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে অট্টালিকা গড়ে তুলেছে। যে অর্থ, সম্পদ ভোগ করতে পারবে না, স্পর্শ করতে পারবে না কিন্তু কি লাভ? যারা এই অর্থ বিদেশে পাচার করেছে তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। একজন মানুষের কত টাকার প্রয়োজন? কয়েকমাস আগে রাজশাহীতে এক ব্যক্তি অর্থের অভাবে এনজিও-র ঋণের দায়ে নিজের দুই শিশু সন্তানসহ স্ত্রীকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করে ঋণ থেকে মুক্তি নেন। এই মৃত্যুর জন্য রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতি আমরা সকলেই দায়ী। এই হচ্ছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, ধনিকবাদী সমাজ ব্যবস্থা, পুঁজিবাদী উদার গণতন্ত্র। এই পুঁজিবাদী উদার গণতন্ত্র কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের কল্যাণের চেয়ে বেশি ক্ষতি সাধন করে। আমাদের নৈতিক মানবিকতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের এত অবক্ষয় হয়েছে, তাতে আমরা মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছি। মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে দিনে শত শত মানুষের মাঝে ব্যবসায়ী সোহাগকে এবং গাজীপুরে দিবাগত রাত্রে সত্য প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিক তুহিনকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, তা এ সভ্য সমাজে বর্বরোচিত হত্যাকান্ড। কেউ তাদের বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসেনি। এই নৃশংস, বর্বরোচিত হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের কোনো পত্রিকা বা কোনো ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় তাৎক্ষণিক প্রকাশিত হয়নি । দুইদিন পরে প্রকাশ করেছে। হয়তোবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশিত না হলে প্রকাশিত হত না। সাধারণ মানুষ জানতে পারতো না, এই হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্র।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট ১৫ মাসে আমরা কি পেলাম? জাতি জানতে চায়। অন্তর্বর্তী সরকার কি বিগত পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের পথ অনুসরণ করছে? না প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে? এটা এদেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়। গত আগস্টে একজন রিক্সা চালককে তাঁর অনুভূতি, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েও তাকে জেলে যেতে হয়েছে। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে পারছি না কেন? ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, অর্থনৈতিক অধিকার, সংস্কৃতিক অধিকার, ন্যায়বিচার, সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ ছাত্র-শ্রমিক-জনতা শহীদ হয়েছেন। ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা, আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু জাতি আজ হতাশ। আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে মব সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে, যা জাতির জন্য অশনিসংকেত। সংবিধান কোরআন বাইবেল নয়, সংবিধান সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। যতদিন মানুষের নৈতিক মানবিক মূল্যবোধের উন্নতি না হয়, রাজনৈতিক দলের ও নেতৃত্বের উন্নতি না হয় ততদিন এই সংস্কার কাজে আসবে না। প্রয়োজন উন্নত চরিত্রের রাজনীতি ও উন্নত নেতৃত্ব।

সাম্প্রতিক সময়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে কতিপয় রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। যার ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতির কাছে ধোঁয়াশার জাল মনে হচ্ছে। আদৌ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি না তা জাতির মনে সন্দেহ জাগ্রত হচ্ছে। দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে জাতির জন্য আমাবস্যার অন্ধকার অপেক্ষা করছে। দেশ কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতিতে পড়বে। গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হবে। সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না, যা পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুরূপ হবে। স্বাধীনতা লাভের ৫৪ বছরেও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশের রাজনীতি হাইজ্যাক করে নিয়েছে। পশ্চিমা কর্তৃত্ববাদীরা আমাদের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। পশ্চিমা বৃহৎশক্তিগুলো আমাদের জাতীয় রাজনীতির অগ্রযাত্রা ব্যাহত ঘটাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য শুভ নয়।

কেবল নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়।
গণতন্ত্র একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করে। এটি শুধুমাত্র একটি শাসনব্যবস্থা নয়, বরং এটি একটি জীবনধারা যা আইনের শাসন, অর্থনৈতিক অধিকার, সংস্কৃতিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতে গঠিত। গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের সকলকে সচেতন ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্র ও জাতির স্বার্থে সর্বজনীন কল্যাণে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি পরিহার করে সব রাজনৈতিক দলগুলোর শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
লেখক: এম এ আলীম সরকার
প্রাবন্ধিক ও রাজনীতিবিদ। লেখক এমএ আলীম সরকার,সভাপতি
বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি( বিজিপি)।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: সাইবার প্লানেট বিডি