নিজস্ব প্রতিবেদকঃ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নে মামলা প্রত্যাহার না করার কারণে এক নারী শারীরিক নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টার শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী নার্গিস আক্তার অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও স্বামীসহ কয়েকজনের জোরপূর্বক হামলায় তার জীবন বিপন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি লক্ষ্মীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে, সদর উপজেলার হাসন্দী গ্রামের বাসু বাজার সংলগ্ন এলাকায়। নার্গিস আক্তার জানান, প্রায় দেড় বছর আগে তার স্বামী মো. আরিফ হোসেন ব্যবসার জন্য আত্মীয়-স্বজন থেকে ধার নেওয়া টাকা নিয়ে ব্যর্থ ব্যবসার অজুহাতে টাকা ফেরত না দিয়ে তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু করেন।
স্থানীয় সন্ত্রাসী ইসমাইলের সহায়তায় তাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় নার্গিস ঢাকা জজ কোর্টে মামলা করেন। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে তিনি উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ দেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলেও অভিযুক্ত টাকা পরিশোধ না করে চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। হত্যাচেষ্টা ও হামলার পরিসর ৬ অক্টোবর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবেদন নিয়ে নার্গিস বাসু বাজার থেকে সিএনজি যোগে লক্ষ্মীপুর শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিছু দূরে পৌঁছালে তার শ্বশুর শাহাবুদ্দিন সিএনজি থামিয়ে নামিয়ে নেয়। সিএনজি চলে যাওয়ার পর ইসমাইল বাগান থেকে এসে তার মুখ চেপে ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় আরিফ হোসেনসহ আরও ৪-৫ জন এসে তাকে বেধড়ক মারধর করে, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা চালায়। নার্গিস বলেন, “ইসমাইল মাথায় আঘাত করতে গেলে আমার কোমরের হাঁড় ভেঙে যায়। তারা আমার সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ১৫,২০০ টাকা, কানের দুল ও গলার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে।” তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় এক সিএনজি চালক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। চারদিন চিকিৎসা নিয়ে ১১ অক্টোবর নার্গিস মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ন্যায়বিচারের জন্য নারীর আকুতি নার্গিস আক্তার দুর্বল সামাজিক অবস্থানে থাকায় অভিভাবকহীন তিনি ন্যায়বিচারের জন্য বারবার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আদালতে মামলা দেওয়া কি অপরাধ? আমি কি কখনো বিচার পেতে পারব না? তারা কি আমাকে বাঁচতে দেবে না?” এই ঘটনা থেকে পাওয়া শিক্ষা ও প্রভাব এই ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন ও বিচার প্রক্রিয়ার দুর্বলতার দিকটি তুলে ধরে। মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ ও সহিংসতা নারীর নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাসে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামরত নারীদের জন্য এটি একটি বড় সংকট। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে নির্যাতিতারা নিরাপদে তাদের অধিকার আদায় করতে পারেন।
স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা আরও প্রভাবশালী ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন, যাতে এ ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করা যায়। এই ঘটনা আমাদের সচেতন করে যে, সামাজিক ও আইনি সহায়তা ছাড়া নির্যাতিত নারীরা ন্যায়বিচারের পথে একাকী। তাই সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে সহায়তা ও নিরাপত্তার পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে আমরা সবাই সচেতন হতে হবে।