মোহাম্মদ আবুল হাশেম বান্দরবান প্রতিনিধি:বান্দরবানের লামা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আলামত হিসেবে জব্দকৃত বিরোধপূর্ণ “গর্জন গাছ” মামলার বাদী পক্ষের কেয়ারটেকার মোজাম্মেল ও থানা পুলিশের এস আই আলমগীরের যোগসাজশে আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে। গত রাতে প্রায় দেড় শত ফুট (২৪ টুকরা) গর্জন কাঠ থানায় নেয়ার কথা বলে আত্মসাৎ করার সময় হাতেনাতে ধরেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্র জানায়,লামা থানার এসআই আলমগীর দুটি গাড়িতে গর্জন কাঠ গুলো লোড করে থানার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এর মধ্যে একটি গাড়ি থানায় পৌঁছালেও অপর গাড়িটি থানায় না নিয়ে একটি স্থানীয় করাতকলে আনলোড করতে দেখা যায়। একই সাথে মেরাখোলা গ্রামের রাস্তার আশপাশে ওই বাগানের বেশ কিছু গাছের টুকরো পড়ে থাকতে দেখে প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
করাতকলে আনলোড করার সময় জানতে চাইলে কাঠ বোঝাই গাড়ীর ড্রাইভার মনির বলেন,আমাকে এই কাঠ গুলো যেখানে আনলোড করতে বলা হয়েছে,আমি সেখানে আনলোড করছি এবং এটার পরিবহণ ভাড়া দিয়েছে মেরাখোলার মোজাম্মেল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দু’পক্ষের দাবি করা বাগান থেকে মামলার বিবাদীপক্ষ জোরপূর্বক ৩টি গর্জন গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেন মালিক পক্ষের মো.শওকত আকবর। পরে লামার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিরোধপূর্ণ গাছ গুলো মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করার নির্দেশ দেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মামলা তদন্তকারী এসআই আলমগীরও বাদীপক্ষের বাগান কেয়ারটেকার মোজাম্মেলের যোগসাজশে আত্মসাৎ এর অভিযোগে আরো ২টি গাছ কর্তন করা হয় বলে অভিযোগ করেন বিবাদী পক্ষের লোকজন। আদালতের নির্দেশে গাছের সবগুলো টুকরো জব্দ করার কথা থাকলেও, এস আই আলমগীরের করা জব্দ তালিকায় মাত্র ৩৯ টুকরো দেখিয়ে বাকীগুলো মোজাম্মেলের যোগসাজশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
এদিকে বিরোধপূর্ণ গর্জন গাছ নিয়ে বাদী পক্ষের মামলা অনুযায়ী মামলার আইও এসআই আলমগীর ঘটনাস্থল তদন্তে গেলে দুএকজন সাংবাদিক গাছের পরিমাণ নিয়ে জানতে চাইলে রাগান্বিত ভাব নিয়ে উত্তরে বলেন,”আপনি কোন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ,যে আপনাকে বলতে হবে,আপনারাই গাছ গুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে যান”! সাংবাদিকের প্রশ্নে এমন জাবাব ভিন্ন কিছু ইঙ্গিত দেয় বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিকরা।
মামলার বিবাদী পক্ষের এক ভুক্তভোগী মাহবুব বলেন, এসআই আলমগীরের থানা হেফাজত কি করাতকল? না হয় আদলতের আলামত হিসেবে জব্দ করা কিছু গাছ থানায় নিলো আর কিছু করাতকলে আনা হলো কেনো! এই কাঠ গুলা যখন মেরাখোলার মোজাম্মেল লোক দিয়ে বাগান থেকে সরাচ্ছে তখন আমি গিয়ে বাঁধা দিলে এসআই আলমগীর আমাকে মামলার জামিনে হস্তক্ষেপের হুমকি দেয় এবং কাঠ গুলা থানায় নেয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা খেয়ে আদলতের নির্দেশ পরিপন্থী কাজ করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলমগীর বলেন,গাড়ীটা থানায় আসার পথে করাতকলে কেন ঢুকলো এবিষয়ে আমি অবগত না। তদন্তাধীন যেটুকু পেলাম,জব্দ তালিকায় তা দেখানো হয়েছে। বাকীটা পরবর্তী তদন্তে আসবে।
লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.তোফাজ্জল হোসেন বলেন,খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আদলতের জব্দ করা গাছ করাতকলে আসার কথা না। কিন্তু গাছগুলো করাতকলে কেন আনলোড করা হলো এটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো.শহিদুল্লাহ কাউসার পিপিএম বলেন,বিষয়টা অবগত হয়েছি। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।