মোহাম্মদ আবুল হাশেম বান্দরবান প্রতিনিধিঃবান্দরবান জেলার সবচেয়ে জনবহুল উপজেলা লামায় একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি মিলে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। অথচ এখানের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ২৩ জন ডাক্তারের বিপরীতে মাত্র দুজন ডাক্তার এবং ২৭ জন নার্সের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র সাতজন। ফলে জনবহুল এ উপজেলা ও পাশের চকরিয়া উপজেলার বমু বিলছড়ি ইউনিয়নবাসীকে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা। এছাড়া ২০২৩ সালে ভয়াবহ বন্যার পানিতে ডুবে এক্স-রে মেশিন, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ইসিজি মেশিনসহ অপারেশন থিয়েটারের যাবতীয় মেশিনারিজ বিনষ্ট হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেন্টাল, চক্ষু, মহিলা ও শিশুরোগসহ প্রসূতি বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই।
আন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত রোগী হামিদা বেগম,আনোয়ার হোসেন ও রিংরা মুরুংসহ অনেকে বলেন,বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ভুতুড়ে পরিবেশে পরিণত হয়। তাছাড়া টয়লেটগুলো অপরিষ্কার। দরজা-জানালাগুলো বেশিরভাগ অকেজো। ঠিকমতো পানি থাকে না। প্রতিদিন শতশত রোগী সামলাতে নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশার বিষয়ে পৌরসভার কাউন্সিলর মো. সাইফুদ্দিন বলেন,দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও সেবিকা না থাকায় দুর্গম পাহাড়ি এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ গরিব ও অসহায় মানুষ ন্যায্য চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। এছাড়া ওষুধ সংকট লেগেই আছে। সাধারণ সর্দি-কাশি,জ্বর, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, ভাইরাস, পেটের নানা অসুখের ওষুধ, স্যালাইন কিছুই এখানে পাওয়া যায় না। জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই এখন রোগী। চিকিৎসক, সেবিকা, রোগ নির্ণয়ক মেশিনারিজ, অন্য জনবল ও বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন,সমতলের তুলনায় উপজেলাটি পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় স্থানীয়রা ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন বেশি। প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী সেবা নেন ও অভ্যন্তরীণ বিভাগে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। এসব রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আরাম-বিশ্রামের সুযোগ হয় না। অথচ নিয়ম হলো দিনে একজন ডাক্তার দশজন রোগী দেখবেন। অপরদিকে ভর্তিকৃত শতাধিক রোগীকে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছেন সাতজন নার্স। টানা ডিউটি করতে গিয়ে নার্সরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানান সিনিয়র সেবিকা নিলীমা রানি। এ বাস্তবতায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গরিব অসহায় জনসাধারণ।
লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা নাদিম দ্রুত শূন্যপদে চিকিৎসক ও সেবিকাসহ অন্যসব জনবল নিয়োগের দাবী করে বলেন, সামান্য দুর্ঘটনায় আহত রোগী ও প্রসূতি মায়ের চিকিৎসার জন্য রোগীকে দৌড়াতে হয় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে। এখানকার জনসাধারণ অধিকাংশ গরিব ও অসহায়। তাই অনেকের পক্ষে দূরের কোনো হাসপাতালে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই জনবল সংকট নিরসন অতি জরুরি হয়ে উঠেছে।