1. [email protected] : adminbackup :
  2. [email protected] : Gk Russel : Gk Russel
  3. [email protected] : stnews :
সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি! ডেসটিনির পরিবার - শিক্ষা তথ্য
শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:২০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি! ডেসটিনির পরিবার আমতলীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ট্রাকে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ১ কলাপাড়ায় ডেঙ্গু রোধে ময়লার ভাগারে ইউএনও’র অভিযান আশ্রয়ণকেন্দ্রে এখন বাস করে গরু-ছাগল! মাগুরার বিডি ক্লিন একটি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রা সংগঠন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়ায় অবৈধ দখলদারদের যৌথবাহিনীর উচ্ছেদ অভিযান কলাপাড়ায় স্ত্রীর সাথে অভিমান করে যুবকের আত্মহত্যা সাংবাদিক সামাদ মতিন’র সহধর্মিণী প্রবীণ সাংবাদিক সুরাইয়া মতিন’র দাফন সম্পন্ন পূবাইল পাঠানবাড়ী কাসিম উলুম মসজিদ ও এতিমখানার নামে চাউল আত্মসাৎ শিবপুরে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ

সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি! ডেসটিনির পরিবার

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
  • ৪৭ Time View

ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ক্রেতা, সরবরাহকারী ও বিনিয়োগকারী একটি সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি। এই সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে ডেসটিনির এমএলএম ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। মামলার জটিলতাসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ডেসটিনির ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পতিত সরকারের দোসর একটি মহল প্রতিষ্ঠান টির ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে আসছে। তারা এখনো ডেসটিনিকে ধ্বংসের পায়তারায় লিপ্ত রয়েছেন। এতে বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীরা আদৌ বিনিয়োগকৃত টাকা ও লভ্যাংশ পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ডেসটিনি যাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারা ফের দায়িত্ব গ্রহণ করলে লভ্যাংশ সহ বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত সম্ভব। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ডেসটিনির বিনিয়োগকারীরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডেসটিনির মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সদস্য সাড়ে ৮ লাখ, ট্রি প্লান্টেশনের সদস্য ১০ লাখ এবং বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৯ লাখ। ২০১২ সালে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের অশনি সংকেত শুরু হয়। ডেসটিনির বর্তমান চেয়ারম্যান পতিত সরকারের দোসর, প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া গংরা নগদ কোটি কোটি টাকার লোভে সরকারী দলের উপরের মহলের সাথে আতাঁত করে নানা চক্রান্ত শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় একজন পরিবহন ব্যবসায়ীর পুজিঁ বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন পত্রিকায় মিথ্যা বানোয়াট নিউজ প্রচার করা হয়। বলা হয়, উধাও হয়ে যেতে পারে ডেসটিনি। এই সঙ্ঘবদ্ধ চক্র ২০১২ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ডেসটিনিকে লুটেপুটে খাচ্ছেন। প্রশান্ত বড়ুয়া চক্র এজন্য ডেসটিনির সাবেক চেয়ারম্যান লেঃ জেনারেল (অব) হারুনুর রশিদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ রফিকুল আমিন সহ পরিচালনা পর্ষদকে মামলায় ঝুলিয়ে গ্রেফতার করা হয়। যাতে আইনী লড়াই ও তাদের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ না করতে পারে এজন্য দীর্ঘ ১২ বছর জেলে আটকে রাখা হয় রফিকুল আমিন সহ অন্যদেরকে। পরবর্তীতে ডেসটিনির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হোন (মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক) ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া। তিনি গত বছর জুলাই মাসে চিকিৎসার নামে দেশ ছেড়ে চলে যান। পরে তিনি আর দেশে ফেরত আসেননি। কারণ তিনি বিগত স্বৈরাচারী সরকারের দোসর ছিলেন। প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া লন্ডনে বসে গত এক বছর ধরে তার আশীর্বাদপূষ্ঠ কতিপয় পরিচালক ও ব্যক্তির সাথে জুম মিটিং করেন। চতুর এই প্রশান্ত নিজের সিগনেচার স্কিনে স্কিন করে অনলাইনে পাঠিয়ে কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের মতামত ছাড়াই সব ধরনের সিদ্ধান্ত এককভাবে নিয়ে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী, বোর্ডের লোকদের শুধু উপস্থিতি স্বাক্ষর নিলে হবে না, মিটিয়ের সিদ্ধান্তের পরে উপস্থিত সকল বোর্ড মেম্বারদের স্বাক্ষর নিতে হবে। কিন্তু তিনি কোন সিদ্ধান্তেই বোর্ডের উপস্থিত মেম্বারদের স্বাক্ষর গ্রহণ করেন না। নিয়ম বহির্ভূতভাবে একা একা সিদ্ধান্ত নেন প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া।

অভিযোগ উঠেছে, প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া ডেসটিনির বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্নসাত করার জন্য ডেসটিনির সিওও হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ডেসটিনির সাবেক ট্রেইনার আশরাফুল আমিনকে।আশরাফুলকে লিড দিচ্ছেন লন্ডনে অবস্থিত পতিত সরকারের দোসর প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া। বিনিয়োগকারীদের ব্যাহত হওয়া সম্পদ উদ্ধার এবং ক্ষতি পূরণ এর উদ্যোগ গ্রহণ না করে আশরাফুল গংরা প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা আত্নসাত করছেন। ষড়যন্ত্রকারীরা ডেসটিনির “টি প্লান্টেশন লিমিটেড” সহ গ্রাহকের টাকায় ক্রয়কৃত বাগান ও জমি বিক্রির কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে আলিশান জীবন যাপন করছেন। তারা বিনিয়োগকারীদের টাকায় কেউ কেউ আলাদা লিমিটেড কোম্পানি এবং এমএলএম ব্যবসা খুলে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। সরকারের কাছে বিনিয়োগকারীদের দাবি, ষড়যন্ত্রের নক্সার মূলহোতা প্রশান্ত- আশরাফুল সিন্ডিকেটের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হোক। একই সাথে ডেসটিনির ব্যাংক একাউন্ট খুলে দিয়ে, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পদ গুলো অতি দ্রুত ফিরিয়ে দেয়া হোক। বিনিয়োগকারীরা ডেসটিনিকে ষড়যন্ত্রকারী ও প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

বিনিয়োগকারীরা জানান, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড বাংলাদেশের স্বনামধন্য নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠানের ৩৭টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ডেসটিনি “টি প্লান্টেশন লিমিটেড”।যেখানে দেশের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। প্রতিশ্রুতি ছিল, বাগানে গাছ রোপণ করে তা বিক্রির মাধ্যমে মূলধনের সঙ্গে লাভসহ টাকা ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু গ্রাহকদের মূলধন সহ লাভেব টাকা আত্নসাত করেছেন সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেট।

ডেসটিনির “টি প্লান্টেশন লিমিটেডের” বাস্তবতা ভয়াবহ। তাহচ্ছে, বান্দরবান জেলার অন্তর্ভুক্ত লামা উপজেলাধীন ২৮৬ খাসিয়াখালি মৌজার “ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডের” ১২৫ একর জমির উপর বাগান গাছ বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। অথচ বাগান টি ছিলো সরকার নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু সরকারের দোসরদের সাথে আতাত করেই ১০০ কোটি টাকার মূল্যবান বাগান মাত্র ১২ কোটিতে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে । বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া সহ কতিপয় ব্যক্তি সংগঠিত হয়ে নিজেদের আখের গোছাতে প্রতিষ্ঠান টি ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বোর্ড মেম্বার জানান, টি প্লান্টেশনের বাগান বিক্রয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছেন মইনুদ্দিন আহমেদ, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের (হাইকোর্ট মনোনীত বোর্ড পরিচালক), কামরুল হাসান (বোর্ড পরিচালক), সাইফুল আলম রতন (বোর্ড পরিচালক), জাহাঙ্গীর আলম (ম্যানেজিং ডিরেক্টর) ডেসটিনি টি প্লান্টেশন, জাহাঙ্গীর আলম (ট্রেইনার) শেয়ারহোল্ডার, আশরাফুল আমিন (শেয়ারহোল্ডার) এবং ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া (হাইকোর্ট মনোনীত বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যান)। তিনি ৫ আগস্টের পর বিদেশ পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে দুদকেও অভিযোগ রয়েছে। প্রশান্ত বড়ুয়া সিন্ডিকেট ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রতিষ্ঠান টি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা আত্নসাতকারী প্রশান্তর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সিওও আশরাফুল আমিন। তিনি টি প্লান্টেশন লিমিটেড ছাড়াও ডেসটিনির টঙ্গীতে গোডাউনে রাখা সংরক্ষিত প্রায় ৯০ কোটি টাকার উপরে মালামাল বিক্রি করেছেন। আশরাফুল তখন ডেসটিনির সিওও’র দায়িত্বে ছিলেন। এসময় ডেসটিনির চেয়ারম্যান ও এমডি জেল হাজতে ছিলেন। এখন দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে নানান ফোন্দিফিকির বের করে ডেসটিনিকে অন্ধকারের গহবরে ঠেলে দিতে মরিয়া আশারাফুল। মানুষের টাকা মেরে আশরাফুলরা দামি গাড়ি এবং বিলাস বহুল জীবন যাপন করছেন।লন্ডনে বসে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রশান্ত বড়ুয়া। এতে শুধু ডেসটিনির বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হচ্ছে, এমন নয়। ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড যাতে আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারে সে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত চক্রটি।

ডেসটিনির কাগজ পত্র অনুসন্ধানে জানা যায়, গাছ বিক্রয়ের নির্দেশ এবং পুরো কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়েছেন বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যান প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া। তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করে, সেখান থেকেই নিয়মিত জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে এই বাগান বিক্রির নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রশান্তর নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন আশরাফুল আমিন সহ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। বিনিয়োগকারীদের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে তারা আছেন ফুরফুরে মেজাজে। তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছেনা কোন আইনি ব্যবস্থা। পরিচালনা পর্ষদের অন্য মেম্বাররা এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে মামলা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।

বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই সংঘবদ্ধ চক্রটি গত ১২ বছর ধরে বিভিন্ন ধাপে, বিভিন্নভাবে বাগানের গাছগুলো বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। পটুয়াখালীর কাউয়ারচর টি প্লান্টেশন লিমিটেডের বাগানের প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করা হয় কামরুল হাসান এর নেতৃত্বে। ফাসিয়া খালি সহ বিভিন্ন স্থানে কোটি কোটি টাকার গাছ এবং জমি বিক্রি করে তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। কামরুল হাসান বরগুনায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের জমি বিক্রি করে কোটি টাকা আত্নসাত করেছেন। তিনি মাল্টিপারপাসের আত্মসাৎকৃত টাকার হিসেব দিতে গড়িমসি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কামরুলের বিরুদ্ধে ডিএমপি পুলিশ কমিশনার ও পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ডেসটিনি কর্তৃপক্ষ সরোজমিন তদন্তে কামরুলের গাছ বিক্রির সম্পৃক্ততা পেয়েছে। অথচ এই সম্পদ ছিল বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা। বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করেন, এই গাছ বিক্রির মূলধন সহ লভাংশ ফিরে পাবেন না। সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, যখন বর্তমান বোর্ডের কিছু সৎ পরিচালক এই দুর্নীতি ও সম্পদ বিক্রির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তখন তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি কয়েকজনকে মারধরও করা হয় বলে এক ভুক্তভোগী জানান।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই দুর্নীতিবাজ চক্রের কিছু অনুসারী এসব সৎ পরিচালকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অপমানজনক মন্তব্য করে চরিত্র হননের চেষ্টা করছেন। যেন তারা ন্যায়বিচারের পক্ষে আর কণ্ঠ না তোলে। ডেসটিনি নতুন করে যে কর্ম পরিকল্পনা করছে তা বাধা গ্রস্থ করতে সব ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত উক্ত সিন্ডিকেট।

এই সংঘবদ্ধ চক্রের দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি বিনিয়োগকারীদের।জড়িত সকল চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছে। পাশাপাশি যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। ভবিষ্যতে যেন এমন প্রতারণা আর না ঘটে, সেজন্য শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। নইলে এদের লাঘাম টেনে ধরা সম্ভব নয়। এদেরর বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি, সংবাদ সম্মেলন এবং মামলার প্রস্তুতি নেয়া হবে বলে জানান ডেসটিনির কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার। তাদের দাবি, সারাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে ডেসটিনির। এই সম্পদ গুলো গ্রাহকদের টাকায় ক্রয় করা হয়েছে। মানুষ বাইরে থেকে যা জানে, মূলত ভেতরের খবর ভিন্ন। ডেসটিনি কারো টাকা মেরে খায়নি। প্রশান্ত-আশরাফুল সিন্ডিকেট করে প্রতিষ্ঠান টির ক্ষতি সাধন করেছেন। আর এর দায় নিতে হচ্ছে ডেসটিনিকে।

ভুক্তভোগীদের মতে, এখন সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। বিনিয়োগকারীদের উচিত একত্রিত হয়ে এই চক্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং আইনি লড়াই শুরু করা। যাদের কারণে ৪৩ লাখ ৫০ হাজার পরিবার অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়েছেন। তারা যেন কোনোভাবেই রক্ষা না পায় সে লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে এই প্রতিবাদ ও তদন্তের জোর দাবি জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের প্রতি অনুরোধ সরকার যেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর স্বার্থে ব্যাংক একাউন্ট এবং সম্পদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি উঠিয়ে নেন।

ওয়াকিবহাল সূত্রমতে, আওয়ামী সরকার আমলে ডেসটিনির উপর সুয়ার হোন মেজর জেনারেল ( সাবেক) তারেক সিদ্দিকী সহ কয়েকজন মন্ত্রী। তারা ডেসটিনি কর্তৃপক্ষ’র কাছে ৪শ’ কোটি টাকা দাবি করেন। ডেসটিনি কর্তৃপক্ষ তাদের এই অবৈধ দাবি প্রত্যাখ্যান করায় নেমে আসে নানা খড়গ। এক পর্যায় ডেসটিনির তৎকালীন চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুনূর রশীদ ও এমডি রফিকুল আমিন সহ কয়েকজনকে মানিলন্ডারিং মামলা ও প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। মামলা গুলো এক পর্যায় দুদকে গড়ায়। দুদকের মামলায় আশরাফুল আমিন, কামরুল হাসান ও মিজানকে পরিকল্পিত ভাবে সাক্ষী করা হয়। শুধু মাত্র বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা চুষে খাওয়ার জন্যই আশরাফুল আমিন গংরা এই জঘন্যতম পথ অবলম্বন করেন। প্রশান্ত বড়ুয়া ও আশরাফুলের বিরোধিতার জেরে দীর্ঘ ১২ বছর আইনী লড়াই করে মামলায় রায় পায় ডেসটিনি। অন্তর্বর্তী সরকার কারাগারে থাকা রফিকুল আমিন সহ সবাইকে জামিনে মুক্তি দেন। এখন প্রতিষ্ঠান টি পুনরায় চালু হলে বিনিয়োগকারীরা তাদের টাকা ফেরত পাবে বলে ভুক্তভোগীরা আশা ব্যক্ত করেন। কিন্তু বোর্ডে যারা আছেন তাদের একটা অধিকাংশ সিন্ডিকেট বাণিজ্যে লিপ্ত। তারা যেভাবে পারছেন লুটেপুটে খাচ্ছেন। এদের বিরূদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পতিত সরকারের পক্ষে মোটা টাকা বিনিয়োগের অভিযোগও রয়েছে।

পাঁচ লাখ গ্রাহকের অর্থ লুটেছে আমার বাজারঃ

ই-কমার্সের আড়ালে এমএলএম ব্যবসা করা “আমার বাজার লিমিটেড” গ্রাহকদের জমা করা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকের অর্থ লুটে রাজধানীর পল্টনের আলিশান অফিস বন্ধ করে দিয়েছে প্রতারক চক্র । তবে আশরাফুল আমিন দাবি করেছেন, আমার বাজার লিমিটেডে কোন গ্রাহকদের টাকা নেই। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত লিমিটেড কোম্পানি। এখানে ৪৯ জন শেয়ার হোল্ডার আছে। কিন্তু এই ৪৯ জন শেয়ার হোল্ডার কারা, তারা কোথাথেকে টাকা পেলেন তার কোন সঠিক উত্তর মিলেনি।

ভুক্তভোগী ও পুলিশ জানিয়েছে, আমার বাজার লিমিটেড একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ভিত্তিক (এমএলএম) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার মূল দায়িত্বে রয়েছেন ডেসটিনির আশরাফুল আমিন। তিনি ডেসটিনির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ট্রেনিং সেন্টারের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিওও) ছিলেন। প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে বিনিয়োগের নামে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মো. মামুনুর রশিদ। ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) হিসেবে নাম রয়েছে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের। তারা ওই গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও পরিচালনার মূল দায়িত্বে ছিলেন আশরাফুল আমিন। প্রতিষ্ঠানটিতে তার পদবি ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর। মূলত ডেসটিনির আদলে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানটি আশরাফুল আমিনই পরিচালনা করতেন।

গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, ডেসটিনির আদলে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদ টাকাই নিতেন। পণ্য কেনার কিছু টাকা ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নেয়া হতো। ফলে অধিকাংশ টাকার ব্যাংক হিসাব নেই। গ্রাহকদের পাশাপাশি শেয়ার হোল্ডার ও পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর শতকোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে আমার বাজার লিমিটেডের কাছে। পাওনাদারদের পাওনা না দিয়ে পল্টনের অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আশরাফুলকে অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়না। সে গ্রাহকের ফোন ধরে না। মানুষের টাকায় কালো গ্লাসের দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। আশরাফুল গ্রাহকদের মূলধন সহ লভ্যাংশ ফিরিয়ে দিতে নানা ধরনের ছলছাতুরি করে সময় ক্ষেপন করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ডেসটিনির সিওও আশরাফুল আমিন এর কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে রাগান্বিত ভাষায় হুমকি স্বরূপ কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল আমিন বলেন, যারা অভিযোগ করেছে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। আমার “টি প্লান্টেশন লিমিটেডের” সাথে সম্পৃক্ততা থাকার কোন সুযোগ নেই। আমি ক্ষমতাপ্রাপ্ত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ না। আর যারা জমি কিনেছে তারা তো সব কিছু খোঁজ খবর নিয়েই কিনেছে। মানুষ তো বোকা নয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ডেসটিনির চেয়ারম্যান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুনূর রশীদ। আমি টি প্লান্টেশনের শেয়ারহোল্ডার না। আমি শুধু ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডার। আপনি আমার বাজার লিমিটেডের ৫ লাখ গ্রাহকদের টাকা আত্নসাত করেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তিনি বলেন, আমার বাজার লিমিটেড একটি কোম্পানি। আপনি জানেন কি? একটা লিমিটেড কোম্পানি করতে কতজন শেয়ার হোল্ডার লাগে। প্রতিবেদক বলে আপনার মুখ থেকে জানতে চাই। তখন আশরাফুল আমিন বলেন ৪৯ জন শেয়ার হোল্ডার লাগে একটি লিমিটেড প্রতিষ্ঠান করতে। সাথে এটাও বলেন এটা কি রফিকুল আমিন এর কোম্পানি নাকি? অপর প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল আমিন বলেন, আমার বাজার লিমিটেড আরো তিন বছর আগে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমার বাজার একটি লজ প্রতিষ্ঠান। তবে গ্রাহকদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

ডেসটিনির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া বিদেশ পলাতক থাকায় তার বক্তব্য ও মন্তব্য জানা যায়নি।

জানতে চাওয়া হলে ডেসটিনির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ রফিকুল আমিন বলেন, ডেসটিনির অশনি সংকেত শুরু হয় ২০১২ সালে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র লুটেপুটে খাচ্ছেন। এদের বিরূদ্ধে কেন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি প্রশ্নে তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তারা জেল হাজতে থাকার কারণে এদের বিরূদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। আর যারা এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তারা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিল। এদের কারণে বিনিয়োগকারীদের হাজার কোটি টাকার উপরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় ডেসটিনির ব্যবসায় ঘুরে দাড়াতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, শেয়ার হোল্ডার /পরিচালক দেশব্যাপী বাগান গাছ বিক্রির পর টাকা আত্মসাৎ করে নিজের ব্যাংক হিসাবে জমা রেখেছে। এখন আবার আগামী সপ্তাহে কুয়াকাটা বাগানের আরো প্রায় ১২ হাজার গাছ কাটার পরিকল্পনা নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রফিকুল আমিন বলেন, আমি এবং মোহাম্মদ হোসেন সম্মিলিতভাবে ডেসটিনির ব্যবসা পুনরায় যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া মেনে স্বচ্ছতার সাথে শুরু করতে আমরা বদ্ধপরিকর। একই সাথে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের টাকা যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের বরাবরে বুঝিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমরা জরুরি ভিত্তিতে আইনী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: সাইবার প্লানেট বিডি