মতলব উত্তর প্রতিনিধি:চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় শিক্ষা ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে ফের আলোচনায় উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন। সর্বশেষ শনিবার (২৮ জুন) এক দিনে তিনটি ভেন্যুতে একযোগে সাব ক্লাস্টার ট্রেনিং আয়োজন করে আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন তিনি। এর আগেও তার বিরুদ্ধে প্রায় ২০ লাখ টাকার খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠে, যার তদন্ত এখনও ঝুলে আছে।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এক দিনে একটি সাব ক্লাস্টার ট্রেনিং পরিচালনা ও তদারকির দায়িত্বে থাকতে পারেন। কিন্তু বেলায়েত হোসেন ২৮ জুন একই দিনে তিনটি স্থানে, তালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৯৫নং মহিষমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০১নং সর্দারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাব ক্লাস্টার ট্রেনিং আয়োজন করেন।
অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রশিক্ষণে তিনি সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো ভেন্যুতে উপস্থিত ছিলেন না। শিক্ষকরা নিজেরাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে নেন। একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, “স্যার আসেননি, তবে প্রশিক্ষণ হয়েছে। খাবারের মানও ভালো ছিল।
এর আগে ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়া সামগ্রী কেনাকাটায় প্রায় ২০ লাখ টাকার অনিয়মের অভিযোগ উঠে। বিষয়টি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আলোচনার ঝড় ওঠে। অভিযোগে বলা হয়, বিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী না দিয়েও বিল উত্তোলন করা হয়, অথবা নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করা হয়।
দীর্গ ২ বছর পেরিয়ে গেলেও খেলাধুলা সামগ্রী সংক্রান্ত অভিযোগে দৃশ্যমান কোনো তদন্ত হয়নি। স্থানীয় শিক্ষক সমাজ বলছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ‘অদৃশ্য প্রভাব’ এবং প্রশাসনিক গাফিলতির কারণেই তদন্ত থমকে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু একজন শিক্ষক বলেন, একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া দুঃখজনক। এতে করে মাঠপর্যায়ে দুর্নীতি আরও উৎসাহিত হয়।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ৩০ জুনের মধ্যে ট্রেনিং শেষ করার নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। এর আগে জেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষণে ব্যস্ত থাকায় আমি সময়মতো শেষ করতে পারিনি। তাই একদিনে কয়েকটি ভেন্যুতে ট্রেনিং হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, এক দিনে একাধিক সাব ক্লাস্টার ট্রেনিং নেওয়ার নিয়ম নেই। তদন্ত করে তিনটি ভেন্যুর মধ্যে একটি রেখে বাকিগুলো বাতিল করা হবে।
এক দিনের মধ্যে একাধিক প্রশিক্ষণ আয়োজন এবং সরকারি বরাদ্দে অনিয়মের ঘটনায় বারবার উঠে আসা এক ব্যক্তির নামই স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়—শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য কেবল কাগজে নির্দেশনা নয়, দরকার শক্ত তদন্ত ও কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ।