নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘটিত হওয়া একাধিক ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৬নং সাবেক কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা ও তার ছোট ভাই মহানগর সৈনিক লীগ সাজু এখনো প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয় কাউন্সিলর পদে না থেকেও শামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে টিসিবি পন্যের কার্ড আওয়ামী লীগের লোকদের মাঝে বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। ২৬নং ওয়ার্ড এলাকায় বঞ্চিত সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। জানা গেছে, সাবেক কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানের হয়ে কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদান।
এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি সহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের সমর্থনে বিগত দিন গুলো তিনি ছিলেন দুর্দান্ত প্রতাপশালী। এমন কি তার বিরুদ্ধে টিসিবির পন্য নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছিলো। টিসিবির পন্য নিয়ে অনিয়ম ও বিতরণে বাধা দেওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের ২৫, ২৬, ২৭নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর সানিয়া সাউদকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে তাকে স্থাানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিলো। ২০২৪ সালের ৭মে তাকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ কাউন্সিলর পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিলো।
৭ মে বরখাস্তের বিষয়ে স্থাানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। স্থাানীয় সরকার বিভাগের আরেক চিঠিতে কাউন্সিলর সামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে স্থাানীয় সরকার আইন ২০০৯ এর ধারা ১৩ (৩) ধারা অনুযায়ী তাকে কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত ৫ মার্চ সন্ধ্যায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য আসা টিসিবির পণ্য বিতরণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদ করায় সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরক সানিয়া আক্তারকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন সামসুজ্জোহা ও তার লোকজন।
এই ঘটনায় কাউন্সিলর সামসুজ্জোহা (৫০), তার ভাই মো. জাহাঙ্গীর (৩৭) ও মো. রিপন ওরফে অটো রিপনের (৪০) বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন সানিয়া। এছাড়াও শামসুজ্জোহার ছোট ভাই সাজুর বিরুদ্ধে এলাকায় জুলুম অত্যাচারের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন সাজু। জড়িত ছিলেন মহানগর সৈনিক লীগের সাথে। এমনকি তার দুই ভাই আলমগীর ও মনির ছিলেন ডাকাতদের সর্দার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময় মদনপুর এলাকায় সাজুর নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালে ২০ অক্টোবর মহানগর সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন মিন্টুকে বন্দরের লক্ষণখোলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও পলাতক ছিলেন সাজু।
সম্প্রতি তারা দুইভাই এলাকায় ফিরে এসেছে। জানা গেছে, সাবেক কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ। মতির অনেক অপকর্মের সাক্ষী এই শামসুজ্জোহা। ৫ আগস্টের পূর্বে শামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে বন্দর থানায় নাশকতার মামলা হলে সে সময় শামসুজ্জোহা সিদ্ধিরগঞ্জে সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির ছত্রছায়ায় আত্মগোপনে থেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরে ছিলেন। ৫ আগস্টের পরও শামসুজ্জোহা ও তার ভাই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
সম্প্রতি তারা এলাকায় ফিরে এসেছেন। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তারে কোনো তৎপরতা দেখায়নি। ফলে এখনো তারা দুই ভাই টিসিবি পণ্যের কার্ড বিতরণের নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগের লোকদের মাঝে বিতরণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী আওয়ামী লীগ ও ওসমানীয় দোসর দুই ভাই শামসুজ্জোহা ও সাজুকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।