সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাই ও বোনদের সাথে একের পর এক প্রতারনা করে যাচ্ছেন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের লামাপাড়া নিবাসী মৃত এস এম তাহির মিয়ার কনিষ্ট পুত্র এস.এম নুরুল ইসলাম ও তার পরিবারের লোকজন। এ ব্যাপারে গত ৩০ নভেম্বর বিশ্বম্ভরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভূক্তভোগীরা। এছাড়াও আরেকটি অভিযোগটি দায়ের করেছেন ঢাকার সূত্রাপুর থানার নবাবপুর মকিমলেন লালচান এলাকার ৬৩ নং বাসভবনের বাসিন্দা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এস
এম সামছুল ইসলাম। অভিযোগে তিনি ছোট ভাই এস এম নুরুল ইসলাম (৭১), এস এম নুরুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫৫),পুত্র এস এম এনামুল ইসলাম তুহিন (৩৫),এস এম রফিকুল ইসলাম মুহিন (৩৪) ও এস এম মাইদুল ইসলাম মাহিন (৩৩) কে বিবাদী করেছেন। অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রণবিদ্যা মৌজার এস.এ রেকর্ডীয় পৈত্রিক জমি ও ভূমি বড় ভাই ও ৪ বোনদেরকে বঞ্চিত করে সমস্ত সম্পত্তি একতরফা ও
অন্যায়ভাবে ভোগ দখল করে যাচ্ছেন ভূমিখেকো নুরুল ইসলাম ও তার পরিবাওে লোকজন। পিতার রেখে যাওয়া বসতবাড়ী ও জমিজমাতে ৫ ভাইবোনের ন্যায্য হিস্যা থাকার পরও কখনও ছটাক পরিমাণ ধান তাদেরকে প্রদান করেননি এই নুরুল।
এমনকি জমিজমা থেকে আয় করা টাকা পয়সাও প্রদান করা হয়নি প্রতারিত ৫ ভাই বোনদেরকে। বরং নুরুল ইসলাম বিভিন্ন সময় ঢাকায় বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে তাদের বাড়ী ও জমির সেটেলম্যান্ট জরিপ কার্যক্রমের মাঠপর্চা গ্রহন,ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ ও নামজারী করানোর কথা বলে এবং মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ফারজানা ইসলাম জুনুর ক্রয়কৃত জমির খাজনা পরিশোধ,দলিলের নকল আদায়সহ নানা কথা বলে ঐ মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ১০ লক্ষ টাকা প্রতারনামূলকভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন। সরলপ্রাণে বিশ্বাস করে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার টাকা হতে ছোট ভাইকে চাওয়া মাত্র দশ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঐ মুক্তিযোদ্ধা ও তার বোনদেরকে দলিল,নামজারী ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের কাগজপত্র প্রদান করেননি প্রতারক নুরুল ইসলাম। বড় ভাই ও বোনেরা সরলমনে বিশ্বাস করে টাকা পয়সা দিয়ে এস.এম নুরুল ইসলামের দ্বারা প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
লামাপাড়া গ্রামবাসী বলেন, এস.এম নুরুল ইসলাম, তার বড়ভাই ও বোনদের সহায় সম্পত্তির আয় ব্যয় বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও দীর্ঘ কয়েক বৎসর যাবৎ তাদের কাছ থেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে,মিথ্যা কথা বলে এবং জাল জালিয়াতি ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে সময় ক্ষেপন করে আসছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে তাদের ভাগ্না ও ভাতিজা এবং আত্মীয় স্বজনেরা লামাপাড়া ও জগন্নাথপুর বাজারে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গেলে এস.এম নুরুল ইসলাম বিভিন্ন রেটে টাকা গ্রহন করে ননজুডিসিয়াল স্টাম্পের দ্বারা আনরেজিষ্টার্ড দলিল সম্পাদন বা জাল কাগজপত্র প্র¯ুÍত করে একে অপরের যোগসাজসে ও পরস্পর পরস্পরের সহযোগীতায় ৫ ভাইবোনের অগোচরে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ও মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর দলিলমূলে ক্রয়কৃত জমিজমা বেআইনীভাবে বন্ধক দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এস.এম নুরুল ইসলাম তাদের এজমালী ও ক্রয়কৃত সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে এবং প্রতারনার আশ্রয়ে বিক্রয় বা হস্তান্তর করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করলেও এ ব্যাপারে শরীকান ভাই বোনদেরকে কোন কিছু অবগত করেনি তিনি।
এস.এম নুরুল ইসলাম, গত ০৩/০১/২০২৩ইং তারিখে জহিরুল ইসলাম পিতামৃত মুখলেছ মিয়া,সাং কারেন্টের বাজার,ডাকঘর মেরুয়াখলা,উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর,জেলা সুনামগঞ্জ এর নামে ৮০ শতক পুকুর বন্দক দিয়ে ৬১ হাজার টাকা, গত ২৩/০১/২০২২ইং তারিখে মোঃ কেরামত আলী মাস্টার পিতামৃত আব্দুল করিম,সাং খৌলারপাড়,ইউপি পলাশ,উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর,জেলা সুনামগঞ্জ এর নামে ৬০ শতক আমন রকম জমি বন্দক দিয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা,গত ২১/০১/২০২২ইং তারিখে মোঃ জিসান মিয়া পিতা মোঃ কেরামত আলী মাস্টার,সাং খৌলারপাড়,ইউপি পলাশ,উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর,জেলা সুনামগঞ্জ এর নামে ৩০ শতক আমন রকম ভূমি বন্দক দিয়ে ৫০ হাজার টাকা,গত ২২/০১/২০২৩ইং তারিখে মোছাঃ রাশিয়া আক্তার পিতামৃত রইছ মিয়া,সাং জগন্নাথপুর,ইউপি সলুকাবাদ, ডাকঘর রতারগাঁও,উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর,জেলা সুনামগঞ্জ এর নামে ৬৭.৫০ শতক আমন রকম জমি বন্দক দিয়ে ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫ শত টাকা, গত ০১/০৮/২০১৫ইং তারিখে মোঃ সাইকুল ইসলাম পিতামৃত ফখর উদ্দিন,সাং জগন্নাথপুর,ইউপি সলুকাবাদ, ডাকঘর রতারগাঁও,উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর,জেলা সুনামগঞ্জ এর নামে ৭৫ শতক আমন রকম জমি বন্দক দিয়ে এক লক্ষ টাকা, গত ২৩/০১/২০২৩ইং তারিখে মোছাঃ হালেমা খাতুন স্বামী মোঃ নুরুল ইসলাম,সাং জগন্নাথপুর,ইউপি সলুকাবাদ, ডাকঘর রতারগাঁও,উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর,জেলা সুনামগঞ্জ এর নামে ৩০ শতক আমন রকম জমি বন্দক দিয়ে এক লক্ষ টাকা, গত ১৭/০১/২০২১ইং তারিখে মোঃ আবুল কাশেম পিতামৃত মজর আলী,সাং লামাপাড়া,ইউপি সলুকাবাদ, ডাকঘর রতারগাঁও,উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর,জেলা সুনামগঞ্জ এর নামে ৮৩ শতক আমন রকম জমি বন্দক দিয়ে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা গ্রহন করে এককভাবে স্বপরিবারে ভোগ করেছে। জানা যায়, গত ২৭/০১/২০২৪ইং শনিবার সকাল ১১ টায় সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রকাশ্য সালিশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মফিজুর রহমান উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে যার যার ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী বিদ্যমান এজমালী সম্পত্তি ভাগ ভাটোয়ারা করে দেয়ার জন্য পলাশ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শেখ মোঃ আক্কাছ আলীকে দায়িত্ব দিলে উক্ত আক্কাছ আলী সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় আমিন ও সার্ভেয়ারদের নিয়ে জমিজমা পরিমাপ করে সীমানা চিহ্নিত খুটি দ্বারা প্রত্যেকের জায়গা আলাদা করে দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম নুরুল ইসলামকে যাদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে সকলের জমি বন্ধক দিয়েছেন তাদের সকলের টাকা নিজ
দায়িত্বে পরিশোধের জন্য আদেশ দেন। কিন্তু বড় ভাইয়ের হাতেপায়ে ধরে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার পরও একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর আদেশ অমান্য করেন জালিয়াত সন্ত্রাসী এস.এম নুরুল ইসলাম ও তার পুুত্ররা। সালিশে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পুত্রদের নামে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সম্পত্তি হস্তান্তর দলিল নং ১২৩৬ তাং ২৪/১০/২০২২ইং এর কথাও গোপন করেন প্রতারক এস.এম নুরুল ইসলাম। পরে ১৬/০৫/২০২৪ইং তারিখে ২৯৮৫৯২০ নং আবেদন করে ২৫/১১/২০২৪ইং তারিখে নামজারী মোকদ্দমা নং ৮৬৫/২০২৩-২৪ সম্পাদন করে ২০৪৬ নং নামজারী খতিয়ান করত: ২০৮৭,২০৮৮,২৪৩০,২৪৩৩ নং দাগের মোট ১.১০ একর এজমালী সম্পত্তি কোনপ্রকার ভাগ ভাটোয়ারা ছাড়াই নিজেদের সুবিধেমতো এককভাবে ভোগদখল করে যাচ্ছেন নুরুল ও তার পরিবার। এছাড়াও গত ২১/১১/২০২৪ইং বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশ অমান্য করে এস.এম নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে তার স্ত্রী ও পুত্ররা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শেখ মোঃ আক্কাছ আলীর পরিমাপকৃত বাড়ী,জমি ও পুকুরের জায়গায় বাঁশের খুটি দ্বারা চিহ্নিত সীমানা খুটিগুলো চুরি করে নেয় এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রী বোনদের জায়গা অবৈধভাবে নিজেদের দখলে রাখে। অন্যদিকে প্রতারক চক্রের পক্ষ নিয়ে জেলা সদরের শাহজাহান চৌধুরী নামের আরেক প্রতারক বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে নগদ ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন ঐ প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে সেদিকে দৃষ্টি এখন সকলের। ##