নিজস্ব সংবাদদাতা:হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী নিয়াজ উদ্দিন আহমেদকে পুলিশী জিঙ্গাসাবাদ শেষে জেল হাজতে প্রেরন করেছেন সোনারগাও থানা পুলিশ। শনিবার (১ মার্চ) দুপুরে বন্দর আমিন আবাসিক এলাকায় থেকে তাকে আটক করে স্থানীয় জনতা। হেফাজত কর্মী হত্যা মামলার আসামি নিয়াজউদ্দিন আহমেদকে (৫৫) ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। পরে তাকে বন্দর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, তার বিরুদ্ধে মামলাটি সোনারগাঁ থানায় থাকায় তাকে ওই থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা জানান বন্দর থানা পুলিশ। পরে তাকে সোনারগাঁ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সোনারগাঁ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারী বিকেলে বলেন, স্থানীয় কিছু লোকজন তাকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদিও, এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ নগরীর ইসদাইরের ওসমানী স্টেডিয়াম এলাকা থেকে নিয়াজ উদ্দিনকে হেফাজতে নেয় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতার সুপারিশে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। যদিও ওইদিন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম বলেন, “নিয়াজ উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের থানাতেও মামলা আছে। উনি আজ আমাদের রেঞ্জে ছিল। কিন্তু তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়নি। আমরা তাকে অবজারভেশনে রাখছি, তাকে হেফাজতে নেইনি। যাচাই-বাছাই না করে যাকে-তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা রয়েছে।” পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল এক নারীসহ সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে অবরুদ্ধ হন হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। তাকে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে পুলিশ ও হেফাজত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আহত হেফাজত কর্মী ইকবাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইকবালের মৃত্যুর ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আরেক হেফাজত কর্মী শাহজাহান শিবলী। ওই মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্য, তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপারসহ ১২৮ জনকে আসামি করা হয়। মামলার ২৯ নম্বর আসামি নিয়াজ উদ্দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় অংশ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্র জানায়, নিয়াজ উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। তিনি শামীম ওসমানের বন্ধু টিপুর শ্যালক। সোনারগাঁও থানা পুলিশ নিয়াজ উদ্দিনকে রিমান্ডের আবেদন পূর্বক আদালতে প্রেরন করে। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর পূর্বক ফের থানায় পাঠায়। সূত্রে আরো প্রকাশ, বন্দরের নাসিক কামাল উদ্দিন মোড় এলাকার বিশেষ আইনে গুম, হত্যাসহ যাত্রাবাড়ি থানায় মামলার আসামী। ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগাও থানায় মামলার আসামী নিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (৫২)। ১ লা মার্চ জনগন নিয়াজ উদ্দিনকে আটক পূর্বক সোনারগাও থানায় হস্তান্থর করেন। নবীগঞ্জ কামাল উদ্দিন মোড় এলাকার মৃত ইউসি মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে নিয়াজ উদ্দিন । তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ি থানায় বিশেষ ট্রাইবুনালে মামলা রয়েছে। যে মামলায় নিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন শামীম ওসমানের ব্যবসায়ীক পার্টনার। এছাড়া সোনারগাও থানায় হেফাজত কর্মী হত্যা মামলা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, ফতুল্লা থানায় ছাত্র জনতার বৈষম্যের বিরোধী আন্দোলনের ও জমি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। নিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ইতিমধো জেল হাজতে থাকলেও শংকায় রয়েছে এলাকাবাসী। তার কবল হতে মসজিদের জায়গা রক্ষার জন্য এলাকাবাসী একাধিকবার মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুরয়া হয়নি। জেল হাজতে থাকা নিয়াজ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে শংকায় কাটছে না এলাকাবাসীর। স্থানীয় লোকজন জানান, নিয়াজ উদ্দিন আহমেদের সকল সেক্টরে লোক আছে। বিশাল টাকার মালিক। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে যে দাপটে ছিল৷ মসজিদ করতে গিয়েও তার ও বাহিনীর কবলে পড়তে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতেও সাহস পেতো না। আল্লাহর ঘর তুলতে যে লোক বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে রাখতে পারে। তার দ্বারা সকল কিছুই সম্ভব বলে মনে করি। নিয়াজ উদ্দিন কবল হতে রক্ষা পেতে প্রশাসনিক সকল দপ্তরে লিখিত অভিযোগ, মামলা, মুসুল্লীদের মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলনসহ সকল কিছু করেও লাভ হয়নি। বরং উল্টো আরো হুমকি, ধুমকির শিকার হয়েছি। ১ লা মার্চ জনগন নিয়াজ উদ্দিনকে আটক পূর্বক পুলিশে দিলেও একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী থানায় মামলার আসামী হলেও আদালতে প্রেরন করেছে ১টি মামলায়। ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলায় নিয়াজ উদ্দিনকে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসবে ওসমান পরিবারের অনেক অজানা নথি।