নিজস্ব সংবাদদাতা: পৌষ মাসের হিম ছড়ানো সকাল। কুয়াশায় ঢেকে আছে শীতলক্ষা নদী। নদীর তীরে বাঁধা রয়েছে নৌবিহারের অভিজাত নৌতরী সুন্দরবন-১৬। ঘাটে অপেক্ষমান নারায়ণগঞ্জ ব্যাচ ৯৭’র সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। সুবিশাল জাহাজ দেখে আগত শিশুদের আনন্দের আর সীমা নেই। কিন্তু পথে রেজিষ্ট্রেশন ও উপহার গ্রহণের বিশাল জটলা। তবুও জটলা ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছে নৌবিহারে আগতরা। নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরেই ১২ শত যাত্রী নিয়ে ছাড়ল সুন্দরবন-১৬। নদীর হিম হিম জল ঠেলে ঠেলে যতোই এগিয়ে যায় ততোই জাহাজের ভেতরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। যেন শীতলক্ষার হিম জলের ভেতরে উষ্ণতা ছড়িয়ে ছড়িয়ে আগাচ্ছে নৌতরী।
এর কিছুক্ষণ আগেই ব্যাচ ৯৭’র নারায়ণগঞ্জ কমিটির সভাপতি ডা. ফরহাদ আহমেদ জেনিথ উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে নৌবিহার-২০২৪ এর উদ্বোধন করেছেন। গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের ১৯৯৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন ব্যাচ ’৯৭ নারায়ণগঞ্জ আয়োজন করে নৌবিহারের। অনুষ্ঠানের শুরুটা ছিলো এমনই ব্যতিক্রম ও উষ্ণতায় মোড়ানো। সকাল সাড়ে দশটায় সুন্দরবন-১৬ গতিতে চলতে শুরু করলো। নাস্তার পর্ব সেরে ততক্ষণে নৌবিহারে আগতরা চা-কফিতে চুমুক দিয়ে রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে জলের সঙ্গে রোদের ও জাহাজের অদ্ভুত মিলনের দৃশ্য দেখছেন।
জাহাজের ভেতরে ভেতরে চলতে শুরু করলো নানা আনুষ্ঠানিকতা। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্কুল থেকে আগতরা নিজেদের মধ্যে পরিচিত হতে শুরু করলো। অনেকের সঙ্গে দীর্ঘদিন পরে দেখা। নানা কুশলাদি। আবার কারও কারও সঙ্গে শুধুমাত্র ফেইসবুকে পরিচয় থাকলেও এবারই প্রথম সামনাসামনি দেখা-পরিচয়।
কমিটির দেয়া সূচী সূত্রে জানা গেছে- নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল ঘাটে সকাল ৮টায় রিপোর্টিং, কুপন ও গিফট সংগ্রহ এবং লঞ্চে প্রবেশ ও নিজ নিজ আসন গ্রহণ। সকাল সাড়ে ৮টায় লঞ্চ ছেড়ে যাবে চাঁদপুর মোহনার উদ্দেশ্যে, ৯টায় সকালের নাস্তা পরিবেশন ও আহার, সকাল ৯:৪৬া হতে ৯:৫৫ টায় ব্যাচ ৯৭, নারায়ণগঞ্জের সকল স্কুলের মৃত বন্ধুদের জন্য দোয়া, বিজয় দিবস স্মরণে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাগত বক্তব্য, সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অন্যন্য উপদেষ্টাগণ নৌবিহার উদ্বোধন, সকাল সোয়া দশটা হতে একক নৃত্য, সঙ্গীত, কৌতুক, অভিনয়, আবৃতি, গল্প, ছড়া পরিবেশন ও নারায়ণগঞ্জের সকল স্কুলের মনোনীত সদস্যের অনুভূতি প্রকাশ, ব্যাচ’ ৯৭, নারায়ণগঞ্জের বিগত দিনের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের ভিডিও ডকুমেন্টেশন, বন্ধুদের স্পাউসদের জন্য বালিশ বদল ও ঝুড়িতে বল ফেলার প্রতিযোগিতা। দুপুরে জাহাজ ভীড়ে উত্তর চাঁদপুরের মোহনপুরে। সেখানে জুম্মার নামাজের বিরতি দেয়া হয়। নামাজ শেষে মধ্যাহ্ন ভোজের খাবার পরিবেশন করে ব্যাচের স্বেচ্ছাসেবকরা। দুপুরে খাবারের পরে অনুষ্ঠান আরও জমে উঠে। নারায়ণগঞ্জের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আশিক ও বাউল জন মাতিয়ে তোলে পুরো জাহাজ। তাদের গানের তালে তালে নাচতে শুরু করে সবাই। আছরের ও মাগরিবের নামাজের বিরতির পরে পুরোটা সময় জুড়ে ছিলো সঙ্গীতের উত্তাপ। এর ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে ফটোসেশন। আলোকচিত্রী আল আমিন সোহাগ তার ক্যামেরায় একে একে বন্দি করতে থাকেন সবাইকে। অনুষ্ঠানের আরেকটি আকর্ষণীয় পর্ব ছিলো র্যাফেল ড্র, পুরস্কার বিতরণ ও আতশবাজি ফোটানো।
সকাল থেকে পর্বে পর্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন- কাজী সাঈদ, মোয়াজ্জেম টিপু, আরেফিন সুলতানা জেমী, ফয়সাল আহমেদ দোলন ও নঈম চৌধুরী। রাতে সারাদিনের অভাবনীয় আনন্দের তরী আবারও নারায়ণগঞ্জ ভিআইপি টার্মিনালে এসে ভীড়ে। হাসিমুখে সবাই ফিরে যায় আপন নীড়ে। সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস ছিলো নারী ও শিশুদের মধ্যে।
ব্যাচ ’৯৭ নারায়ণগঞ্জ কমিটিরি সভাপতি ডা. ফরহাদ আহমেদ জেনিথ জানান- অনুষ্ঠানটিকে সফল করতে সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী সজিব, সহ-সভাপতি জিতু সুমন, সায়েলা পারভীন মিলি, তাহফিম রাসেল, ফয়সাল আহমেদ দোলন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফরিন জেমী, মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ, জানে আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েম কবির, যুগ্ম-সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন, মাঈনুদ্দিন সোহাগ, অর্থ সম্পাদক জাকির হোসেন, দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান সোহাগ, তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক হালিম উল্লাহ টিটু, প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক আহমদ আলী, কার্যকরী সদস্য মামুন ফকির, ফরহাদ উদ্দিন শাওন সহ উপদেষ্টা পরিষদের সকল সদস্য, স্কুলগুলোর প্রতিনিধিগণ ও অংশগ্রহণকারী সকলের অবদান রয়েছে।