‘ইদ’ জনজীবনের আনন্দের সম্ভার। ইদ উপলক্ষে প্রত্যেকের থাকে নানা আয়োজন। মনজুড়ে বইতে থাকে উচ্ছাসের জোয়ার। রোজা শেষে ইদের খুশির কাছে হেরে যায় পিছনে থাকা সকল দুঃখ-কষ্ট। নিজেকে নতুনভাবে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে উঠে সবাই। তবে সকলের ইদ একরকম হয় না, কারো কারো ইদ হয় ভিন্ন রকমের, ঠিক তেমনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) কিছু শিক্ষার্থীর ভিন্ন ইদের গল্প তুলে ধরেছেন মো: আসাদুর রহমান।
মাকে ভীষণ মনে পড়বে, প্রতিবারের মতো এবারও ইচ্ছে ছিল পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার। মায়ের মুখের হাসি দেখে তার হাতের সেমাই খেয়ে ইদের নামাজ পড়তে যাওয়ার। তবে ভাগ্য সায় দেয়নি। পরিবার ছাড়াই কাটবে ইদ। মায়ের হাতের রান্না খাওয়া কিংবা পরিবারের সকলের সাথে আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এই প্রথম পরিবার থেকে দূরে ইদ পালন। ফাইনাল পরীক্ষা সন্নিকটে হওয়ায় আর বাড়ি ফেরা হলো না। মা ফোনে বারবার কান্নাকাটি করেছেন। তবে মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছি এই ভেবেই যে, একদিন সফলতার গল্প হয়তো সবকিছু বদলে দিবে। বাড়ি ফেরা হবে, মায়ের মুখে হাসি ফুটবে।
আলামিন হোসেন আবির, শিক্ষার্থী গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
ইদের দিনটাও সাধারণ দিনের মতোই লাগে, আমার জীবনে ইদ এখন আর আগের মত আনন্দ নিয়ে আসে না। অন্যদিন গুলোর মতই ইদের দিন আমার কাছে একরম মনে হয়। বাবা-মা অসুস্থ, হাসপাতালে দৌড়ঝাপ সব কিছু মিলিয়ে ইদ যে কবে আসে-যায় টের পাই না। আগে যখন বাবা-মা সুস্থ ছিল তখন ইদের আনন্দটা ছিল ভিন্ন রকমের। ইদের কেনাকাটা, নতুন বাহারি খাবারের আয়োজন আরও কতো কি! সেসব এখন স্বপ্নের মতো লাগে। আগের সেই ইদ আর এখনকার ইদের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। ক্যান্সারে আক্রান্ত মা ও বাবার দীর্ঘদিনের গ্যাংরিন, একা সব সামলাতে হিমসিম খেতে হয়। তাই আর আনন্দ আসে না। তবে পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে। আশায় থাকি-একদিন সব ঠিক হবে, আমরাও সবার মতো ইদ উপভোগ করবো।
ফারজানা আক্তার, শিক্ষার্থী গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
বাবাহীনতায় জীবনের সব আনন্দ হারিয়ে গেছে, আব্বুকে ছাড়া আবারও ইদ করতে হবে ভাবলেই নিজের অজান্তে চোখ ভিজে যায়। আব্বু যে আমার কাছে নেই এটা ভাবলেই ভিতরটা হাহাকার করে উঠে। বাবা থাকলে ইদে টাকা দিয়ে বলতেন ইচ্ছামতো কেনাকাটা করতে। সবাই যখন ঈদের নামাজ পড়ে বাবার সাথে কোলাকুলি করে, আমি তখন বাবার কবরের কাছে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হই। বাবার সেই স্নেহ-আদর কোনভাবেই ভুলে থাকা যায় না। সবাই নতুন পোশাক পরে ঘুরতে বের হলেও আমি ব্যস্ত থাকবো আমার কাজে। ঈদের দিনেও ছুটি নেই। পড়াশোনার খরচ জোগাতে করতে হচ্ছে চাকরি। বাবা থাকলে এই সংগ্রাম করতে হতো না। বটবৃক্ষ থাকতে কষ্ট টের পাইনি। বাবা ছাড়া শুধু ইদ নয়, জীবনের সব আনন্দ-উল্লাস হারিয়ে যায়।
শেখ শিমুল,শিক্ষার্থী গণ বিশ্ববিদ্যালয়।