তাহিরপুর(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
যে রাজনীতিতে ত্যাগ ছিল গৌরব, আজ সেখানে গ্রুপিংই ভাগ্য নির্ধারণ করে”এই তীব্র বাস্তব কথায় নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তাহিরপুর উপজেলার রাজপথ কাঁপানো এক সময়ের কর্মী ও বর্তমান মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রোকন উদ্দিন। সম্প্রতি তাঁর একটি সাক্ষাৎকার বিকৃতভাবে প্রকাশ করা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসামাত্রই রোকন উদ্দিন নিজের ফেসবুক আইডিতে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ ও নিন্দা প্রকাশ করেন, এবং বিকৃত তথ্য প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন।
রোকন উদ্দিন বলেন,“আমি সাক্ষাৎকারে পরিষ্কার বলেছিলাম আমি রক্ত-মাংসে গড়া একজন বিএনপি কর্মী। তবে একজন মিডিয়া কর্মী হিসেবে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে রনজিতকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই। অথচ আমার বক্তব্য কেটে বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে। এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মানহানিকর। সত্য বিকৃতি কোনোভাবেই সাংবাদিকতার পরিচয় হতে পারে না। তিনি আরও বলেন,“আমি রাজনীতিতে এসেছি আদর্শের টানে, পদ বা প্রাপ্তির আশায় নয়। যখন পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে দাঁড়ানো মানে ছিল জীবনের ঝুঁকি নেওয়া, তখন আমরা ছিলাম রাজপথে। মামলা, হামলা, নির্যাতন, সব সহ্য করেছি দলের জন্য। অথচ আজ যারা সেদিন ছিলেন না, তারাই নেতৃত্বে। এটি শুধু কষ্টের নয়, দলের জন্য লজ্জার।”
২০১৮ সালের এক ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতি টেনে তিনি বলেন, তৎকালীন উপজেলা বিএনপি সভাপতি নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তাহিরপুর বাজারে বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই রাতেই পুলিশ বাহিনী বিএনপি অফিসে হামলা চালায়, মঞ্চ ভাঙ্গচুর করে, নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়। গ্রেপ্তার করা হয় উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, উপজেলা শ্রমিকদল সভাপতি ফেরদৌস আলম, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হুদা, বিএনপি নেতা মাহবুব চৌধুরী, সাজিদুর রহমান, কামাল পাশাসহ অসংখ্য নেতাকে।
তিনি আরও জানান, সেই ঘটনার পর তাহিরপুর উপজেলায় প্রথম নাশকতা মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে আমি রোকন উদ্দিন কে ১১ নম্বর আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই মামলায় বিএনপি কর্মী জুনাব আলী,মেহেদী হাসান উজ্জ্বলসহ আরও অনেকেই আসামি হন। সেদিন গ্রেফতার এড়াতে আমাকে জীবনের অনেকটা দিন ফেরারি জীবন কাটাতে হয়েছে, নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। কিন্তুু এর পূর্বে অপর এক নাশকতার মামলায় আমাকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
রোকন উদ্দিন বলেন,“আমরা যখন রাজপথে রক্ত দিয়েছি,লাঠিচার্জ সহ্য করেছি,তখন অনেককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ আজ সেই অনুপস্থিত মানুষগুলো নেতৃত্বের আসনে এটাই আজকের রাজনীতির নির্মম বাস্তবতা। এটি শুধু অন্যায় নয়, এটি ত্যাগীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।” ২০২৪ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আওয়ামী লীগ যে একতরফা নির্বাচন আয়োজন করেছে,তা গণতন্ত্রকে হত্যা করার মতো। বিএনপি ও গণতন্ত্রকামী মানুষ সেই ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া ইতিহাস কখনও ক্ষমা করবে না।নিজেকে গর্বিত বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিয়ে রোকন উদ্দিন বলেন,“আমি বিএনপি’র কর্মী,এটাই আমার গর্ব ও পরিচয়। তবে আমি একজন মিডিয়া কর্মীও।
সাংবাদিকতা মানে কারও মনোরঞ্জন নয়—সত্য তুলে ধরা। দায়িত্ববোধ থেকে আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদন করতে হয়। এটিকে দলীয় অবস্থান পরিবর্তন হিসেবে দেখাটা শুধু অজ্ঞতা নয়, কূটচিন্তার বহিঃপ্রকাশ।”তিনি আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,আমার বক্তব্য বিকৃত করে যারা প্রচার করেছে,তারা শুধু একজন ক্ষুদ্র সাংবাদিককেই নয়, সত্যকেও অপমান করেছে। এমন বিকৃত সংবাদ গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দাবি করছি আমার সম্পূর্ণ বক্তব্য হুবহু প্রকাশ করা হোক।” রোকন উদ্দিন তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে ২০১৮ সালের নাশকতা মামলার কপি সংযুক্ত করেছেন, যাতে স্পষ্ট দেখা যায়, তিনি কেবল কথায় নয়, কর্মে, ত্যাগে ও রাজপথে বিএনপির সঙ্গে ছিলেন এবং দলের আদর্শে অনড় ছিলেন।