রাকিব হোসেন মিলন: বাংলাদেশ এখন এক নতুন রাজনৈতিক সময়ের মুখে। জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে চারদিকে। তৈরি মতবিরোধ এখনও চলছে। মূলত, এই সনদে যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো এসেছে সেগুলো ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। কিন্তু যেহেতু এই সনদ কোনো নির্বাচিত সংবিধান সভার মাধ্যমে হয়নি, তাই এর গণতান্ত্রিক ভিত্তি শক্ত করতে গণভোট জরুরি। জনগণের ভোটেই ঠিক হবে—এই সংস্কার তারা চায় কি না। প্রথম কারণ, গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদকে আমরা বৈধতা দিতে চাই। এটি জনগণের সম্মতির দলিল হয়ে উঠবে। যদি জনগণ ভোট দিয়ে সায় দেয় তাহলে এটা কেবল কিছু বিশেষজ্ঞের মত নয় বরং জাতির ইচ্ছার প্রকাশ হবে। দ্বিতীয় কারণ, আমরা চাই না এই সংস্কারের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি পরের সংসদের হাতে থাকুক।
কারণ অভিজ্ঞতা বলে, যে দলই ক্ষমতায় যাক, তারা অনেক সময় নিজেদের দলীয় স্বার্থকে আগে রাখে। তাই জনগণের ভোটে যদি জুলাই সনদ পাস হয়, তাহলে পরের সরকার বাধ্য থাকবে সেটা বাস্তবায়ন করতে। এইভাবে জনগণের ভোটই হবে সরকারের ওপর গণতান্ত্রিক চাপ। তৃতীয় কারণ, গণভোট ছাড়া এই চাপ সৃষ্টি করা হলে সেটি অগণতান্ত্রিক হতো। কিন্তু গণভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামত প্রকাশ পেলে সেটা পুরোপুরি গণতান্ত্রিক হবে। চতুর্থত, যদি জুলাই সনদ গণভোটে জয় পায়, অথচ পরের সরকার সেটা বাস্তবায়ন না করে, তাহলে মানুষ মনে করবে তারা প্রতারিত হয়েছে। তখন জনগণের এই ক্ষোভ থেকে নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন তৈরি হতে পারে।
জুলাই সনদ তখন হয়ে উঠবে পরিবর্তনের প্রতীক—যা ভবিষ্যতের রাজনীতিকে নতুন পথে চালিত করবে। অন্যদিকে, যদি জুলাই সনদ গণভোটে হেরে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এইভাবে পরিবর্তন চায় না। তারা সংসদীয় প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন পছন্দ করে। সেটাই হবে জনগণের মতামত, আর সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। শেষত, যদি আমরা গণভোট ছাড়া জুলাই সনদ চাইতাম, তাহলে এটা হতো কেবল কিছু সুশীল মানুষের চিন্তা। কিন্তু গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ মানে হলো—জনগণের নিজের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা। জুলাই সনদ ও গণভোট তাই শুধু কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ নয়, এটা হচ্ছে জনগণের আস্থা ফেরানোর এক বড় সুযোগ। এখানে মানুষ নিজের কণ্ঠে জানাবে তারা কেমন ভবিষ্যৎ চায়।