মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব নেন ফাতেমা তুল জান্নাত।
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়ে জেলার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ছিল তাঁর প্রধান চ্যালেঞ্জ। দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি আন্দোলনের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।
সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন মুন্সিগঞ্জের স্বীকৃত ফেসবুক পেজ থেকে বিদায়ী জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত মুন্সিগঞ্জবাসীকে উদ্দেশ্য করে এক খোলাবার্তায় এসব তথ্য জানান।
সেখানে বলা হয়, বিদায়ী জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের পরিকল্পনা ও উদ্যোগে তার মেয়াদে জুলাই ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, দোয়া মাহফিল আয়োজন, শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রস্তুতসহ নানা কাজ করেন তিনি। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের করিডোরে স্থাপন করা হয় ‘জুলাই স্মৃতি গ্যালারি’। পরে প্রকাশিত হয় আন্দোলনের ধারাবাহিকতা এবং শহীদদের জীবনী নিয়ে ‘চব্বিশের রক্তকথা’। শহীদ ১৪ জনকে স্মরণ করে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে “এক শহিদ এক বৃক্ষ” কর্মসূচির আওতায় রোপণ করা হয় ১৪টি সোনালু গাছ। শহীদদের কবর সংরক্ষণ ও বাঁধাইয়ের কাজ করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
জেলার পর্যটন সম্ভাবনা তুলে ধরতে ছয় উপজেলার ৬২টি প্রত্নতাত্ত্বিক ও দর্শনীয় স্থান নিয়ে প্রকাশ করা হয় বাংলা-ইংরেজি ভ্রমণ গাইড ‘প্রত্নকথা’। আর ভূমি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে তৈরি করা হয় ‘ভূমিকথা’ নামে একটি সহজপাঠ্য পুস্তিকা। বইটি জেলার প্রায় ১১ হাজার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়া হয় এবং এ নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় জেলাব্যাপী কুইজ প্রতিযোগিতা।
৩১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে উদ্বোধন করা হয় নির্মিত কালেক্টরেট জামে মসজিদ। তাঁর মেয়াদকালে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় প্রতিনিয়ত আলোচনায় এসেছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। শিল্প, স্বরাষ্ট্র ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের উপদেষ্টা, সচিব ও নৌবাহিনী প্রধানকে যুক্ত করে অনুষ্ঠিত হয় একাধিক অগ্রগতি সভা। প্রতি মাসেই মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এসব আলোচনা অব্যাহত রাখা হয়।
জেলার গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে—
পুরাতন ফেরিঘাট-মুক্তারপুর-শ্রীনগর (ছনবাড়ি) পর্যন্ত চার লেন সড়কের সঙ্গে নতুন সংযোগ সড়ক, সিরাজদিখানে নার্সিং ইনস্টিটিউট, কাটাখালী খাল খনন, প্রত্ননিদর্শন সংরক্ষণ, শিল্পকলা একাডেমি সংস্কার, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পৌর ভবন নির্মাণ, আড়িয়ল বিল সংরক্ষণ প্রকল্প, ট্রমা সেন্টার মেরামত, নতুন পার্ক নির্মাণ, গুরুত্বপূর্ণ খাল পুনঃখনন, চারটি নতুন তদন্তকেন্দ্র স্থাপন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবন নির্মাণ এবং মুন্সিগঞ্জ-মিরকাদিম পৌরসভায় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনার উদ্যোগ। বেশির ভাগ প্রকল্প ইতিমধ্যে অনুমোদন বা বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে।
জেলায় ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে সিরাজদিখানের পাতক্ষীর। একইভাবে লৌহজংয়ের কাঠের ঘর, মিরকাদিমের ধবল গরু ও আড়িয়ল বিলের মিষ্টি কুমড়া জিআই স্বীকৃতির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
মেয়েদের জন্য জেলায় প্রায় ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে নিরাপদ কমফোর্ট জোন ‘HerSpace’, যার ২১টি উদ্বোধন করা হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনেও বছরজুড়ে ছিল নানা আয়োজন-জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচ, জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ, তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে কাবাডি, ফুটবল ও সাঁতার প্রতিযোগিতা।
‘আমার চোখে জুলাই বিপ্লব’ কর্মসূচির আওতায় জেলা পরিষদের অর্থায়নে বিডি ক্লিনের সহায়তায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
বিদায়ী বার্তায় ফাতেমা তুল জান্নাত বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জের মানুষের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। আমার কোনো কাজ বা আচরণে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন। আমার এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নই ছিল আমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। এই জেলার মানুষের আন্তরিকতা আমি আজীবন মনে রাখব।’