রাকিব হোসেন মিলন:
ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা কখন, কোথায়, কত শক্তিতে আঘাত হানবে—তা আগে থেকে নির্ভুলভাবে বলা যায় না। তাই আগাম প্রস্তুতি এবং সঠিক সচেতনতা জীবন রক্ষার সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। পৃথিবীর গভীরে থাকা টেকটোনিক প্লেটগুলোর সরে যাওয়া বা সংঘর্ষের ফলে ভূগর্ভে শক্তি সঞ্চিত হয়। এই শক্তি হঠাৎ মুক্ত হয়ে কম্পন সৃষ্টি করলে সেই ঘটনাকেই আমরা ভূমিকম্প বলি। মাত্রা বেশি হলে অল্প সময়েই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ তৈরি করতে পারে। আমাদের দেশ ভূমিকম্প-প্রবণ একটি দেশ হওয়ায় এখানে সচেতনতা আরও জরুরি।
ভূমিকম্প হলে প্রথম কয়েক সেকেন্ডই বাঁচার সবচেয়ে বড় সুযোগ। তখন আতঙ্ক না ছড়িয়ে বরং দ্রুত নিরাপদ কৌশল ব্যবহার করা প্রয়োজন। ভবনের ভেতরে থাকলে দৌড়ে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা না করে বরং ‘ডাক–কভার–হোল্ড’ পদ্ধতি মানা উচিত। অর্থাৎ দ্রুত নিচে ঝুঁকে পড়া, টেবিল বা মজবুত কোনো কাঠামোর নিচে আশ্রয় নেওয়া এবং পায়ের অংশ শক্ত করে ধরে রাখা। জানালার কাছে বা ভারী আলমারির পাশে দাঁড়ালে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, তাই এগুলো থেকে দূরে থাকা দরকার। লিফট ব্যবহার করা যাবে না, সিঁড়িও তখন বিপজ্জনক হতে পারে।
যারা ভবনের বাইরে থাকেন তারা খোলা জায়গায় চলে যেতে পারেন। তবে মাথার ওপরে বিদ্যুতের তার, পুরোনো ভবনের দেয়াল বা কোনো সাইনবোর্ড থাকলে দূরে সরে যাওয়া জরুরি। রাস্তায় গাড়ির ভেতরে থাকা নিরাপদ হতে পারে—শুধু গাড়িটি রাস্তার পাশে থামিয়ে রাখতে হবে। কম্পন থেমে গেলে দ্রুত গ্যাস, মেইন সুইচ ও লাইনগুলো বন্ধ আছে কিনা দেখে নেওয়া উচিত।
ভূমিকম্পে প্রাণহানি কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রস্তুতি। ঘরের ভারী আলমারি ও তাকগুলো দেয়ালে আটকে রাখা, জরুরি ব্যাগে প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী, পানি, টর্চলাইট, পাওয়ার ব্যাংক রাখা উচিত। স্কুল-কলেজ, অফিস বা বাড়িতে ভূমিকম্প প্রতিরোধ মহড়া করলে বাস্তব পরিস্থিতিতে আতঙ্ক কমে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে। নতুন ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প সহনশীল মানদণ্ড নিশ্চিত করা—এটাও বড় সুরক্ষা।
ভূমিকম্প কোন সময় আসবে জানা যায় না, তবে প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। সচেতনতা ছড়ানো, নিয়মিত অনুশীলন এবং নিজের নিরাপত্তা কৌশল জানা—এগুলোই আমাদের টিকে থাকার সবচেয়ে বড় অস্ত্র।