রিপোর্ট, মো.নজরুল ইসলামঃ- বরগুনার আমতলীতে ‘তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম, শ্বশুর ফারুক গাজী, শাশুড়ি খাদিজা বেগম ও চাচা শ্বশুর মঞ্জু গাজীসহ ১০ জন আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী’ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিষপান করেন আমতলী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মো. নিয়াজ মোর্শেদ তনয় (২৬) নামের এক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
ররিবার সকালে জানাযা শেষে হলদিয়া মোল্লা বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে ছয় বছরের দাম্পত্য জীবনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখে শুক্রবার সকালে বিষপান করেন তিনি। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা, পরে অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয় তনয়কে, সেখানে তার মৃত্যু হলে আমতলীতে নেমে আসে শোকের ছায়া, তার দাম্পত্য জীবনের সুদীর্ঘ লেখা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। জানা যায়, ২০১৮ সালে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুল গ্রামের নান্নু মোল্লার ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ তনয়ের সাথে চলাভাঙ্গা গ্রামের ফারুখ গাজীর মেয়ে ফারিয়া জান্নাতি মীমের বিয়ে হয়, বিয়ের ছয় মাসের মাথায় মীমের প্রেমিক রাকিবের সাথে ঘনিষ্ট ছবি দেখতে পায় স্বামী তনয়, এরপর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়, পরে প্রেমিক রাকিব তনয়কে জানায় মীমের সাথে তার আগে বিয়ে হয়েছে, এর মধ্যে ওই দম্পতির ঘরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও স্ত্রী মীমকে সুপথে আনতে পারেনি বলে ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন তনয়। ফেসবুকে তনয় লিখেন, তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম, রাকিব, বাহাদুর, প্রিন্স রাজসহ একাধিক ছেলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। এ সকল ঘটনা মেনে নিতে না পেরে তনয় মীমকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর তালাক দেয়। তালাক নোটিশ পেয়ে ১৭ অক্টোবর স্ত্রী মীম তার স্বামী তনয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন, ওই দিনই পুলিশ তনয়কে গ্রেফতার করেন।
তনয়ের বাবা নান্নু মোল্লার অভিযোগ, আমতলী থানার ওসি আরিফ মামলার নথি না পেয়েই তার ছেলেকে গ্রেফতার করেছে, এ মামলায় তনয় ছয় দিন জেল হাজতে ছিলেন, এছাড়া তনয় ফেসবুকে লিখেন, ওসির সামনেই মীমের আত্মীয় প্রিন্স, জসিমসহ কয়েকজন তাকে মারধর করেছে, কিন্তু ওসি তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। স্ত্রীর এমন পরকীয়া ও নির্যাতন সইতে না পেরে গত শুক্রবার ভোররাতে তনয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও তার স্বজনদের নির্যাতনের বর্ণনা স্ট্যাটাস দিয়ে বিষপান করেন, মুহুর্তের মধ্যে তার পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এদিকে তনয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী মীম, তার বাবা ফারুক গাজী ও তাদের স্বজনরা পলাতক রয়েছেন। তনয়ের বাবা নান্নু মোল্লা বলেন, আমার ছেলেকে মীম, ফারুক গাজী, খাদিজা বেগম ও মঞ্জু গাজীসহ তার স্বজনরা মানসিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
তিনি আরো বলেন, মীম একাধিক পরকীয়ার জড়ালে আমার ছেলে তাকে তালাক দেয়, ওই তালাকের পর মীম আমার ছেলের বিরুদ্ধে বরগুনা নারী শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা দায়ের করেন, কিন্তু মামলার নথি না পেয়েই আমতলী থানার ওসি আমার ছেলেকে গ্রেফতার করেছিল, আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলে বিচার দাবি করছি। এবিষয়ে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম ও তার বাবা ফারুক গাজীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তনয়কে নথি না পেয়ে গ্রেফতার এবং তার সামনে মীমের স্বজনদের মারধরের কথা অস্বীকার করে আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, আদালতের আদেশ মতে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে হস্তান্তর করা হয়েছিল, তনয় মৃত্যুর ঘটনা শুনেছি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।