আসিফ জামান, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ে প্রেমের ফাদে অপহরণের শিকার হওয়া মিলনের লাশ ২৬ দিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। জমিজায়গা বিক্রি করে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও ছেলেকে জীবিত না পেয়ে নিহতের পরিবারের কান্না যেন থামছেই না। মিলন হোসেনের হত্যাকারীদের বিচার চাইতে আসা স্বজনদের আর্তনাদে আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠেছে। কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন স্বজনরা। মিলনের করুন মৃত্যুশোক স্পর্শ করেছে কাছের থেকে দূরের মানুষকেও।
মিলন হোসেনের হত্যাকারীদের ফাসির দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় করেন এলাকাবাসীরা। পরে জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা মিলন হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন স্বজনদের। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ছেড়ে চৌরাস্তায় অবস্থান নেন তারা। এতে প্রায় দেড় ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। এরআগে বিক্ষুপ্ত জনতা ১ আসামি সিজানের বসতবাড়ি ভাঙচুর জ্বালিয়ে দেয়।
নিহত মিলন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাও ইউনিয়ননের চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে। মিলন দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র। বৃহস্পতিবার রাত ৩ টায় ঠাকুরগাঁওয়ের জামালপু ইউনিয়নের মহেশপুর বিটবাজার এলাকায় অপহরণকারীর বাসার পিছনের পরিত্যক্ত টয়লেট থেকে লাশটি উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এর আগে রাত ১০ টার সময় সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করে ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ঠাকুরগাঁও সদরের মহেশপুর বিটবাজার এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে সিজান আলী (২৮) ও আরাজি পাইকপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ (২৫) ও সালন্দর ইউনিয়নের শাহীনগর তেলিপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে রত্না আক্তার রিভা (১৯)। এসময় মুরাদের হেফাজত থেকে ৪,৯৭,০০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৩ ফেব্রুয়ারী মিলন হোসেনের সঙ্গে ফেসবুকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি সঙ্গে যোগাযোগ হয়। একপর্যায়ে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি মিলন হোসেনকে দেখা করার কথা বলে এবং একই দিন দুপুরে দেখা করার জন্য পীরগঞ্জ থেকে জেলা শহরের মুন্সিরহাট পলিটেকনিক্যালের পিছনে এক লিচু বাগানে যায়।
এরপর রাতে মিলন বাড়িতে না আসলে তার বড় ভাই হামিদুর রহমান মিলনের মুঠোফোনে কল করলে ফোন বন্ধ পায়। মিলনকে ফোনে না পেয়ে তার ভাই পরিবার ও এলাকার লোকজনকে অবগত করলে সবাই মিলে মিলনকে বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করে কোথাও তার সন্ধান পায়নি। ওই দিন রাত ১টার দিকে মিলনের বাবাকে ফোন করে অজ্ঞাতা একজন ব্যাক্তি জানান যে, মিলন তাদের হেফাজতে রয়েছে। অতঃপর তারা ত্রিশ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করেন। পরে সদর থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করে তার পরিবার। অপহরেনের তিনদিন পরেই ২৬ তারিখে মিলনকে হত্যা করে অপহরণকারীরা।
এরপর মিলনকে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারের কাছে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ বাগিয়ে নেয় অপহরণকারী চক্রটি। এঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যম এ প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ, ২৫ লাখেও মেলেনি মুক্তি এই শিরোনামে সংবাদ প্রচার হলে বিশৃঙ্খলাবাহিনী মিলন হোসেনকে উদ্ধারে মাঠে নামেন। পরবর্তীতে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সিজান ও মুরাদকে আটক করে।
আটকের তাদের জিজ্ঞসাবাদ করা হলে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আসামী সিজানের বাড়ির পার্শে অব্যাবহৃত টয়লেটের স্লাবের ভিতরে থেকে বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মাটি খুড়ে অপহৃত মিলন (২২) এর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে আরেক আসামি রত্না আক্তার ইভাকে আটক করেন। ধারণা করা হচ্ছে অপহৃত মিলন অপহরণকারী চক্রকে চিনে ফেলায় তারা হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন,’ অনেক দিন ধরে এই বিষয়ে কাজ করছিলাম আমরা। কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। প্রযুক্তির সহযোগিতায়া তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা স্বীকার করে তারা মিলনকে খুন করেছে ও তাদের দেখানো মতে লাশ উদ্ধার করা হয়। লাস্ট বর্তমানে মর্গে রয়েছে। আর আসামিদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া চলছে। এরপর আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হবে।