নিজস্ব সংবাদদাতা: নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন ভুঁইগড় রূপায়ণ টাউন জামে মসজিদে হামলার ঘটনায় মামলা হওয়ার ১৭ দিন পার হলেও আসামীদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ ফতুল্লা মডেল থানার।
গত ২০ মার্চ রূপায়ণ টাউনে আধিপত্য বিস্তার করে জোড়পূর্বক রূপায়ণ টাউন জামে মসজিদের খতিব শায়েখ জামাল উদ্দিন (৫০) কে অব্যাহতি ও লাহ্নিত করাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলায় খতিব সহ ৩জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- খতিব শায়েখ জামাল উদ্দিন (৫০), এম. এ. হোসাইন রাজ (৩৬) ও আঃ হান্নান (৪০)।
ও-ই ঘটনায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে অভিযুক্ত করে বৃহস্পতিবার রাতেই ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন হামলায় আহত মানবাধিকার কর্মী ও সমাজ সেবক এম. এ. হোসাইন রাজ। গত শনিবার (২২ মার্চ) তা মামলা রুজু হয়, মামলা নং- ৪১।
ভুক্তভোগী মানবাধিকার কর্মী এবং সমাজ সেবক এম. এ. হোসাইন রাজ বলেন- মামলা হওয়ার পর থেকেই সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরা এবং মামলার আসামিরা আরোও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিগত ৫ আগষ্টের পর হইতে রূপাউণ টাউনের ভিতরে বহিরাগত স্থানীয় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা আদিপত্য বিস্তার, হুকুমজারী, চাঁদাবাজী, রাহাজানি এবং দখল দারিত্ব করিয়া আসিতেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রতিবাদ করায় আসামিরা আমার উপর ক্ষিপ্ত হইয়া বিভিন্ন সময় আমাকে জীবন নাশের হুমকি দিয়া আসিতেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ ফেব্রুয়ারী বিএনপি নামধারী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ মৃত কালাচাঁন মেম্বারের ছেলে কাজী মাজেদুল হক ও মৃত আলী হোসেনের ছেলে তোফায়েল হোসেন লিটন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে হুমকি-ধামকি দেয়। এবং ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ও-ই দিনই ফতুল্লা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
পরবর্তীতে এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ মার্চ সন্ধ্যা অনুমান ৭.০০ ঘটিকার সময় তারাবির নামাজের পূর্ব মুহূর্তে কাজী মাজেদুল হক ও তোফায়েল হোসেন লিটনের পক্ষে মোঃ সাকিব সহ আরও অজ্ঞাত নামা ২ জন আমার নিকট হইতে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়ে যায়। এ-ই চাঁদাবাজীর টাকায় ওমরাহ করতে যায় বলে শোনা যায়।
এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে গত ২০ মার্চ তারাবির নামাজ শেষে মসজিদের ভিতরে উক্ত সন্ত্রাসীদের নির্দেশে প্রায় ৬ জন সহ অজ্ঞাত নামা ৭/৮ জন চাঁদার দাবীতে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করিয়া গুরুতর রক্তাক্ত জখম সহ হাড় ভাঙ্গা জখম, চুরি ও ভয়ভীতি হুমকি প্রদান করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসা শেষে আমি বাদী হইয়া সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ একটি মামলা রুজু হয়। যাহার মামলা নং- ৪১ (০৩)২৫।
আমি উল্লেখিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উক্ত মামলা দায়ের করার পরও সন্ত্রাসীরা আমাকে জীবন নাশের হুমকি দিয়া আসিতে থাকাবস্থায় গত ২৪ মার্চ দুপুর অনুমান ১.৪৫ ঘটিকার সময় ফতুল্লা থানাধীণ রূপায়ণ টাউনের ২৫নং বিল্ডিংয়ে আমার অফিসে অবস্থানকালে আবারো কাজী মাজেদুল হক ও তোফায়েল হোসেন লিটনের নির্দেশে দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া বে-আইনী জনতাবদ্ধে অনাধিকারে মোঃ তোফায়েল হোসেন লিটন’র ছেলে মোঃ প্রিন্স (১৮), মৃত জলিল আহমেদ’র ছেলে মোঃ জহিরুল হক (৫৫), কাজী মাজেদুল’র শ্যালক বাবু (২৭), আবুল কালাম’র ছেলে সোহাগ (৩৫), আবু তাহের পাটোয়ারী’র ছেলে মোঃ আবু সাঈদ পাটোয়ারী রাসেল (৪৩), মৃত নুরু মেম্বারের ছেলে মোঃ শাহিন (৪২) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন আমার অফিসে হামলা চালিয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অফিসের টেবিল ড্রয়ার থেকে লুট করে নিয়ে নেয়। এবং রাত ১০ টার মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা না দিলে এবং রুজু করা মামলা তুলে না নিলে, আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলা এবং রূপায়ণ হইতে জোড়পূর্বক বাহির করিয়া দিয়া আমার ফ্ল্যাট দখল করিয়া নিবে বলিয়া হুমকি প্রদান করিয়া চলিয়া যায়।
এঘটনা ফতুল্লা থানার ওসিকে অবগত করিলে তিনি এ-ই ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগ দিতে বললে আমি সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ্য করে গত ২৭/৩/২৫ ইং তারিখে ফতুল্লা মডেল থানায় আরও একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। যাহা এখনও মামলা আকারে এজহারভুক্ত করেনি ফতুল্লা মডেল থানা।
মামলা ও অভিযোগ দেওয়ার পরও আসামিদের গ্রেফতার না করায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার ও হুমকী দিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার না করায় আমি নিরুপায় হয়ে গত ২৮ মার্চ বিকেলে আসামীদের গ্রেফতার ও নিরাপত্তা চেয়ে রূপায়ণ টাউনবাসীদের সাথে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করি। তৎক্ষনাৎ ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোঃ শরিফুল ইসলামকে মুঠোফোনে আসামীদের গ্রেফতার করতে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার সাহেব। কিন্তু সে-ই নির্দেশও পাত্তা দিচ্ছেনা ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোঃ শরিফুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী মানবাধিকার কর্মী এবং সমাজ সেবক এম. এ. হোসাইন রাজ বলেন- বিএনপি নামধারী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ কাজী মাজেদুল হক ও তোফায়েল হোসেন লিটন, বিএনপি নেতা ও নারায়ণগঞ্জের অভিভাবক প্রফেসর মামুন মাহমুদ’র নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসিতেছে। কিন্তু আমার জানামতে প্রফেসর মামুন মাহমুদ একজন ভালো, ভদ্র, বিচক্ষণ ও সাধারণ মানুষের নেতা। এবং তিনি সন্ত্রাসী রাজনীতি করেন না। বরং সন্ত্রাসীদেরকে প্রশ্রয় দেন না। তাহার নাম ভাঙিয়ে তাহার ইমেজ নষ্ট করছে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা।
এদিকে রূপায়নের একাধিক বাসিন্দা জানান- আমরা দিনরাত ২৪ ঘন্টা পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মামলা হলো এরপর চাঁদা দাবির অভিযোগ দেওয়া হলো। পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে আসামীদের গ্রেফতার ও নিরাপত্তা চেয়ে অভিযোগ দেওয়া হলো তবুও আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে। রাতের আধারে পুলিশ আসামিদের সাথে বসে চা খাচ্ছে তবু তাদের গ্রেফতার করছে না। এতে করে আমরা রূপায়ণ টাউনবাসী আতংকে দিন কাটাচ্ছি।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এমন আরেক বাসিন্দা বলেন- আমাদের সামনে পুলিশ সুপার আসামীদের গ্রেফতার করতে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোঃ শরিফুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আসামিরা প্রকাশ্যে থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত একটা আসামীও ধরতে পারেনি। আমরা রূপায়ণ টাউনবাসী পুলিশ সুপার সহ সকল প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বিএনপি নামধারী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ কাজী মাজেদুল হক ও তোফায়েল হোসেন লিটন সহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
এ বিষয় ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম’র কাছে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।