মোঃ পন্ডিত হোসেন নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ‘পানি ছাড়া জীবন চলে না’ এই কথাটা যেন আজ হাস্যকর হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজারো মানুষের জন্য। ওয়াসার লাইনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে পানি এলেও, সেই পানি এখন যেন অভিশাপ হয়ে উঠেছে। দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বহু মানুষ, বাড়ছে পেটের পীড়া, চর্মরোগসহ নানা জটিলতা। বিশুদ্ধ পানি যেন এখন এই শহরে এক বিলাসবহুল চাহিদার নাম! দুর্গন্ধ, ময়লা আর অস্বস্তিতে পিষ্ট নগরবাসী। ওয়াসার পানি শুধু পান করার অযোগ্যই নয়, এমনকি ওই পানি দিয়ে গোসল কিংবা মুখ ধোওয়াতেও ভোগান্তি চরমে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, পানির দুর্গন্ধ এতটাই তীব্র যে গোসলের পরেও শরীরে সেই গন্ধ লেগে থাকে।
কেউ কেউ বলছেন, মুখ ধোয়ার পর চোখ জ্বালা করে, ত্বকে চুলকানি হয়। এর প্রভাব পড়ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার স্বাস্থ্যেই। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাদা পাত্রে রাখলে পানি স্বচ্ছ মনে হলেও ওয়াসার পানি কালচে, ছাই রঙের এবং ময়লাযুক্ত। অনেক পরিবার ওয়াসার পানি ফিল্টার করেও ব্যবহার করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে রান্নার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ডিপ টিউবওয়েলের পানি আনতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও ব্যক্তিমালিকানা পাম্পের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করতে হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি। দুই গ্লাস বিশুদ্ধ পানি যেন এখন ‘আর্থিক বোঝা’। যেসব পরিবারে পর্যাপ্ত পানি নেই, তারা কিনে খাচ্ছেন পানির বোতল। এতে মাসে গড়ে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
আবার অনেক বাড়িতে বাসাভাড়া ছাড়াও পানি বাবদ আলাদা চার্জ দিতে হয়। কিন্তু সেবার মান নেই বললেই চলে। গলাচিপা এলাকার গৃহিনী নাসিমা কাজল আক্তার বলেন,‘ওয়াসার পানি দিয়ে কিছুই করা যাচ্ছে না। রান্নার পানি আনতে হয় পাশের এলাকা থেকে, আর খাবার পানি কিনে খাই। এতে সংসারের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এটা আসলে এক ধরনের জুলুম। যেখানে পানি পাচ্ছি না, সেখানে বিল দিচ্ছি, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ বাড়ির মালিক বশির মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওয়াসার পানি দিয়ে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। অথচ মাস শেষে নিয়ম করে বিল দিতে হয়। শুনছি, ওয়াসা পানির দাম আবার বাড়িয়েছে, অথচ তার কোনো কারণ বলা হয়নি।
সেবা ছাড়া দাম বাড়িয়ে দেওয়া মানে তো ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা।” সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগের কথা জানানো হলেও, বাস্তবে সেই সুফল এখনো মেলে না নগরবাসীর ভাগ্যে। পানি মানুষের মৌলিক অধিকার—সেটি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার আরও দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। নারায়ণগঞ্জের হাজারো পরিবার তাকিয়ে আছে বিশুদ্ধ পানির আশায়। তাদের চাওয়া, কেবল এক গ্লাস পরিস্কার, গন্ধহীন ও স্বাস্থ্যসম্মত পানি।
সেটাই কি এত কঠিন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ওয়াসার পানি যখন সমস্যা হয় তখন সব জায়গায় হয়না। কিছু কিছু জায়গা সমস্যা গুলো দেখা দেয়। যেখানে সমস্যা গুলো আমরা দেখি সেখানে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহন করি। আমরা আমাদের পানির ডিপার্টমেন্ট’র সাথে কথা বলবো, জাতে করে নগরবাসীর কোন সমস্যা না হয়। দ্রুতই এর সমাধান দেখবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দারা।