নারায়ণগঞ্জের বন্দর ঘাটে নৌকা পারাপারে ২ টাকা অতিরিক্ত টোল আরোপে ফুঁসে উঠেছে নেটিজেনরা পাশাপাশি একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন ৩-৪ লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা ও ট্রলারযোগে নদী পারাপার হন। সাম্প্রতিক সময়ে বারবার ট্রলার ডুবির ঘটনা, প্রাণহানী আর নতুন করে অতিরিক্ত টোল আরোপ—সবমিলিয়ে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, ঘাট এলাকায় প্রাথমিকভাবে একটি ট্রলার পারাপার ব্যবস্থা চালু থাকলেও তা নিরাপত্তাহীন এবং অস্থায়ী। কয়েকদিন পরপর ট্রলার উল্টে যাওয়ার ঘটনায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ এখন বিকল্প কোনো স্থায়ী অবকাঠামোর স্বপ্ন দেখছেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ ও রোগী পরিবহন—সব ক্ষেত্রেই এই ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘাটে নৌকা ও ট্রলার পারাপারে নতুন করে অতিরিক্ত ২ টাকা টোল আরোপ করায় ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সাধারণ জনগণ এই টোল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, যেখানে ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই, সেখানে টোল বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই।
স্থানীয় সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে তারা বলেন, “বছরের পর বছর ধরে আমরা একটি ব্রিজের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো সরকারই স্থায়ী সমাধান দেয়নি। আমরা আর কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে নৌকা ঠেলতে চাই না, আমরা উন্নয়ন চাই। আর কদমরসূল সেতু কিভাবে নবীগঞ্জ এবং বন্দর ঘাট এলাকার যাত্রীরা একত্রে সুবিধাভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থাও করতে হবে।”
বন্দর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, নৌকা পারপারে অতিরিক্ত ২ টাকা টোল আদায় অত্যন্ত জুলুম। আমি এটা চরম বিরোধিতা করি। মিঃ আতাউর আরো বলেন, সেতু নির্মানের বাস্তবতা হচ্ছে যেহুতু কদম রসূল সেতু একনেকে পাশ হয়েছে, তাই আমি চাইবো বন্দর ঘাট থেকে একটি সড়ক যেন সরাসরি সেতুতে সংযুক্ত করা যায়। এতে উভয় এলাকার মানুষ সুবিধাভোগী হবে।
উপজেলা সিনিয়র সিটিজেন ফোরেমের সভাপতি আলহাজ্ব এড. মোঃ মতিউর রহমান মতিন বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায় কোনভাবেই কাম্যনয়, যদি এটা সরকারি সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, গরিবদুঃখী যাত্রীদের কথা চিন্তা করে আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো যেন এটি পুনঃবিবেচনা করা হয়। আর যদি সরকারি সিদ্ধান্ত না হয়, তাহলে এটা অবৈধ ও সম্পূর্ণ বে’আইনি। মিঃ মতিন আরো বলেন আমি চাইবো একনেকে পাশ হওয়া কদমরসূল সেতু হতে বন্দর ঘাট পর্যন্ত সরাসরি সংযোগ সড়ক হয় যেন বন্দর ঘাটের যাত্রী ভোগান্তি দূর হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঝিরা জানান, শুধু জনগন না আমাদের উপরেও জুলুম চলছে, তারা প্রতি নৌকায় ১ বেলায় ১শ ৫০ টাকা টোল নির্ধারণ করেছে যা গত ৩২ বছরে আমরা দেইনি।
হিলফুল ফুজুল শান্তি সংঘের সভাপতি মাহতাব হুসাইন বলেন,নৌকা যোগে নদী পারাপারে ১৪ থেকে ২৪ টাকা ঘুনতে হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের সাথে নীরব জুলুমের শামিল। এটা ২৪’এর জুলাই স্প্রিটের সাথে সাংঘর্ষিক। মিঃ মাহতাব বলেন, ঘাট দিয়েই কদম রসূল সেতু বাস্তবায়ন করে বন্দর বাসির ভোগান্তি দূর করতে হবে । অন্যথায় ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু কিংবা এক মুখি কদম রসূল সেতু আদৌ বন্দরবাসীর উপকার আসবে না।
ফেসবুক ব্যবহারকারী সোহান নামের একজন বলেছেন, বন্দর ঘাটে সেতু না হলে কোথাও সেতুর প্রয়োজন নেই।
বন্দর ফ্রেন্ডস ক্লাবের এডমিন সজল সরকার বলেন, এ জুলুম করে কারা তাদের পকেট ভারি করছে সবার ভাবা উচিত। আমাদের এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। দ্রুত কদমরসূল সেতু নির্মান কাজ শুরু হলে এ জুলুমবাজ সিন্ডিকেটের কালো হাত ভেঙ্গে যাবে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দ্রুত একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে যাতে করে বন্দর অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে সহজতা আসে এবং জীবন ঝুঁকি হ্রাস পায়। তারা সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অচিরেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।