1. [email protected] : adminbackup :
  2. [email protected] : Gk Russel : Gk Russel
  3. [email protected] : stnews :
মৎস্য খাতের একাল সেকাল - শিক্ষা তথ্য
রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মৎস্য খাতের একাল সেকাল পটিয়ায় সাবেক চেয়ারম্যান কাসেমসহ তার দুই ভাইকে গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন না’গঞ্জে পবিত্র আখেরী চাহার শোম্বাহ্ ও আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান বেরলভী (রাঃ) এর ওরস মোবারক উদযাপন শ্রীপুরের নাকোল ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি বার্ষিকী নির্বাচন ফলাফল বধিরদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতারক কালামের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবী নারায়ণগঞ্জ জেলা দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু কুয়াকাটা সৈকতে আবারও ভেসে এসেছে ৩ ফুট দৈর্ঘ্যের মৃত ডলফিন সাগরে ৫ দিন ভেসে থেকে জীবিত উদ্ধার জেলে মোরশেদ লক্ষ্মীপুরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক -২ ভূমিদস্যু, মামলাবাজ ও প্রতারক চক্রের হয়রানী থেকে প্রতিকার পেতে সাংবাদিক সম্মেলন

মৎস্য খাতের একাল সেকাল

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
  • ৫৬ Time View
লিখেছেন, মোঃ ফরহাদ হোসেন বাবুঃ- মাছে ভাতে বাঙালি বলে গর্ব করা এই বাঙালীরা হয়ত অনেক আগেই তাদের সে গর্বের মুখে ছাই পুরেছে। মাছ ভাত একসময় বাঙালির প্রধান খাদ্য হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে যা ৯০ দশকের পাঠ্য পুস্তকের পাতায় উল্লেখ ছিলো। আমাদের দেশে বিয়ে বাড়িতে সামর্থ্য অনুযায়ী ভরপুর রসনা ভোজের আয়োজন করা হয় যার প্রথম স্থানে থাকে বিভিন্ন ধরনের মাছের রেসিপি। বাঙালির বিয়ে, বিভিন্ন বার্ষিকী অনুষ্ঠান সহ প্রায় সকল প্রকারের আয়োজনে থাকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে ভরা রেসিপি। গ্রাম থেকে শহরের প্রতিটি মানুষ জাত, স্বাদ ভেদে মাছ পছন্দ করে। আমাদের দেশে স্বাধু পানি, মিষ্টি পানি ও লোনা পানির মাছ পাওয়া যায়, তার ভিতরে সামুদ্রিক ও লোনা পানির মাছ মানুষ সবচাইতে বেশি পছন্দ করে। মোদ্দা কথা হলো মাছ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার ও কৃষ্টি সংস্কৃতির অংশ। মাছ প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রতিবছর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়। ২০২৪-২৫  চলতি অর্থবছরে ৯১ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন মৎস্যজাত বিদেশে রপ্তানি করে ৫ হাজর ১৪৫ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়েছে।ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টি  চাহিদা মিটিয়ে একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থানে প্রাকৃতিক সম্পদ মৎস্য ভান্ডার বিশ্বব্যপী এখন সর্বজনস্বীকৃত। জিডিপির ৩.২৫% আসে মৎস্য খাত থেকে। দেশের প্রায় দুই কোটির বেশি মানুষ প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতে জড়িত যা মোট জনসংখ্যার ১১%।  প্রকৃতির ওপর আমাদের দেশের মানুষ বেজায় নির্মম নির্দয় আচরণ করিতেছে, যেকারণে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে মাছের অভয়ারণ্য। বৃহত্তর স্বার্থ নিয়ে মানুষ এতটুকু সচেতন নয়, ব্যক্তি স্বার্থে মানুষ অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা, নগরায়ন ও স্থাপনা নির্মানের মাধ্যমে ক্রমশ জলাধার সংকুচিত করিতেছে। শিল্পকারখানার বর্জ্য পদার্থ প্রতিনিয়ত পানির সাথে নির্গত হইতেছে, জলযানের প্রতিনিয়ত কালো শিশা যুক্ত ধোঁয়া, ডিজেল, পেট্রোল ও লুব্রিকেন্টস পানিতে নির্গত হওয়ার কারনে পানি দুষিত হয়ে জাত ভেদে মাছের সংখ্যা হ্রাস পাইতেছে।সবচাইতে বড় নির্দয় ও বিবেক বিবেচনাহীনের এবং অসচেতনতার পরিচয় দেয় মৎস্য আহরোণকারি জেলেরা। নদী, খাল, বিল, হাওর, বাওর ও সমুদ্রে মাছ আহরোণে এতটুকু বিবেক বিবেচনাবোধ জেলেদের মধ্যে নেই। মাছ স্বীকারে গিয়ে প্রায় সকল জেলে মা মাছ, বৈশাখ জৈষ্ঠ্যমাসের বাইশ, অপ্রয়োজনীয় ছোট মাছ নিধন করিতেছে অহরহ। নদীতে অবৈধভাবে বেহুন্দি জাল ফেলে কোটি কোটি ইলিশের পোনা, পোয়া, কোড়াল, চিংড়ি ও কাকড়া সহ শতশত প্রজাতির পোনামাছ ধ্বংস করিতেছে। আবার কোনো কোনো জেলে বেহুন্দি জাল ফেলে তার থেকে সামান্য কিছু বড় মাছ রেখে প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ মৃত পোনামাছ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও অল্প সময়ে অধিক মাছ স্বীকারের জন্য অবৈধ প্রযুক্তি, চায়না দুয়ারি চাই, বিভিন্ন ক্যামিক্যাল প্রয়োগ করে মাছের বংশবিস্তার রোধ করা হইতেছে। মাছের বংশবিস্তার রোধে কৃষকদের দায় কম নয়, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যায়। চলতি বছরের ন্যায় প্রতি বছর মৎস্য সপ্তাহের আয়োজন করা হয় ইহাতে দেশে মৎস্য ভান্ডারের উন্নতি না হলেও মৎস্য অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তার আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে ঢের। মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় মৎস্য আহরোণ, উৎপাদন, রক্ষনাবেক্ষেন, প্রশিক্ষন, পোনা অবমুক্তকরন ও জেলেদের সুবিধা নিয়ে নানান কর্মজজ্ঞের ব্যবস্তা বা সরকারি নিয়মনীতি থাকলেও তার ২ আনা বাস্তবায়ন হয়, বাকি ১৪ আনা কাগজ কলমের নিষ্ঠুরতম ফন্দির জালে আটক হয়ে আসছে। প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় প্রতি জেলা উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের কোটি কোটি বরাদ্দ হয় অথচ এসব প্রকল্পের সিংহভাগ বাস্তবায়ন না করেই গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও কর্মদক্ষতা খুবই কম এবং উদাসীন। কর্মকর্তাদের এসকল অযোগ্যতা, দুর্বলতা ও উদাসিনতার কারনে মৎস্য সম্পদ নিয়ন্ত্রণে বাধাগ্রস্ত হইতেছে। মৌসুম অনুযায়ী সামুদ্রিক মাছের প্রজনন, রক্ষনাবেক্ষনে মৎস্য কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দূর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্যের কারনে এলাকাভিত্তিক অবাধে চলে মৎস্য নিধন।
আমি নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে দায়ী ও দোষারোপ করছিনা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার  মহিপুর, কুয়াকাটা, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন নদ নদী সহ সারাদেশে বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে ঝাটকা ইলিশের মা মাছ সহ অনেক মাছ না মারার জন্য সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে অনেক জেলে তা উপেক্ষা করে মাছ স্বীকার করে আবার কেউ কেউ দল, গোষ্ঠী ও ঘুষ এবং নিজ নিজ ক্ষমতাবলে সরকারের নিষেধাজ্ঞার থোরাই পরোয়া না করে অবাধে মাছ স্বীকার করে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় নিষেধাজ্ঞা সময়ে মাছ স্বীকারের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের গোপন যোগসাজশ। গোপন যোগসাজশের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক একজন সমন্বয়ক গঠন করা হয় যার মাধ্যমে কিছু জেলের তালিকা তৈরী করে নৌকা প্রতি সপ্তাহ অন্তর নির্দষ্ট পরিমান টাকা ধার্য্য করা হয়। যেসকল জেলে সপ্তাহ অন্তর টাকা দিতে পারবে শুধুমাত্র তারাই নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে মাছ স্বীকার করতে পারবে। এর চাইতে ভয়ংকর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, জেলেদের থেকে তোলা আদায় করার বড় অংশটি চলে যায় জেলা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা কর্মচারীর পকেটে এবং এর বাকী অংশ যায় কিছু অকার্যকর সাংবাদিক সংগঠনে ও কিছু চাটুকার সাংবাদিকদের পকেটে। ((আমাদের দেশের মানুষ এখন আর নতুন করে অবাক হয়না, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেদের কাছে মাছ স্বীকারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে অনায়াসে বলে দেয় যে আমরা পয়সা দিয়ে মাছ ধরি। আবার অনেক জেলেরা অভিযোগ করে বলেছেন যে সরকার আমাগো জন্যে বছর বছর চাউল পাঠাইলেও আমাগো তা দেয়না তাই পেটের দায়ে গাঙ্গে জাল দিতে আইছি নাইলে গুরাগারা আর কিস্তির অপিচারের জালায় ঘরে দুয়ারে থাকতে পারিনা))। উল্লেখ থাকে যে ২০২৩ -২৪ অর্থবছরে বনিকবার্তার রিপোর্ট অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের মোট ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৮৯ জন জেলের মধ্য ২ লাখ জেলেই সরকারের দেওয়া চাল পায়নি। ২০০৫-৬ অর্থবছরে বিদেশে মৎস্য রপ্তানিতে আয় ছিলো ৩৫০০ কোটি টাকা এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে মৎস্য রপ্তানির আয় ৪৭৯০ কোটি টাকা যা চলতি বছরে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৫১৪৫ কোটি টাকা। প্রশ্ন হলো তুলনামূলক মাছের রপ্তানি আয় বেড়েছে কি না? মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হইতেছে কি না? সাধারন মানুষের মাছ ক্রয়ের সাধ্য কতটুকু? ইলিশ বাংলাদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কতটুকু? দেশের সরকারের লাভ কতটুকু না কি ক্ষতির পরিমাণ বেশি? এর উত্তর হলো না না এবং ক্ষতির পরিমান বেশি।ভাবতেই অবাক লাগে যে মৎস্য খাতের এতো এতো অধপতনের পরেও সরকার বাৎসরিক মৎস্য সপ্তাহ অনুষ্ঠানে সোনা, রুপার পুরুষ্কার দেয়। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও সহজ হিসেব কষে দেখা যায় ২০১২ সাল থেকে জেলেদের চিহ্নিত করে নিবন্ধন করা হয় যার সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ ১৮ হাজর ৯৩০ জন  এবং একই সাল থেকে বছরে দুই কিস্তিতে জন প্রতি চাল দেয়া হয় ১৭২ কেজি, যা মোট চালের পরিমান ৩ লাখ ১২ হাজার ৫৫ টন, যার বাজার মূল্য ১৮৭৭১৩০০০০০ টাকা। একই সাথে ২০১২ সাল থেকে মৎস্য অধিদপ্তরে নানান প্রকল্প ও মেগাপ্রকল্পের নামে সরকার শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আসছে , সেই সাথে প্রতি বছর কিছু জেলেদের গরু, প্রশিক্ষন, এবং অভিযানের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায় করছে। ২০১২ থেকে সরকার মৎস্য খাতে উপরোল্লিখিত এত এত ব্যায়ের পরেও কি তুলনামূলকভাবে মৎস্য খাতের উন্নয়ন, পুষ্টি মাত্রা ও রপ্তানি আয় বেড়েছে? না বরং ২০১২ এর পূর্বে এত এত ব্যায় না করেও তুলনামূলকভাবে রপ্তানি আয় বেশি ছিলো, মানুষের মাছ ক্রয় করার ক্ষমতা ছিলো, মানুষ অনায়াসে ইলিশ ক্রয় করে খেতে পারতো, মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটানো যেতো। তাহলে কেনো সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায়ের এই উদ্যোগ গ্রহন করলো? আমি সার্বিক দিক থেকে বিবেচনা করে বলব সরকার মৎস্য খাতের উন্নয়নেই এই উদ্যোগ গ্রহন করেছে, কিন্তু অপরিকল্পিত, অকার্যকর, অযোগ্য, দূর্নীতিবাজদের কবলে পরে মৎস্য খাত মহা বিপর্যায়ের মুখে পতিত হতে যাচ্ছে। যেহেতু দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ মৎস্য পেশায় জড়িত সেহেতু আমার লেখা মাঠ পর্যায়ের তথ্য উপাত্ত উপরোল্লিখিত সকল বিষয়ে বিশ্লেষণ করে এই খাতের উন্নয়নে এখনই স্বচ্ছ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের ভুমিকা নেওয়া প্রয়োজন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: সাইবার প্লানেট বিডি