মোঃ আলাউদ্দীন মন্ডল রাজশাহী:রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুইজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও এক ব্রাদারের বিরুদ্ধে রোগীর স্বজনকে অপমান,হুমকি এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় গুরুতর অবহেলার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে সমাজসেবক ও রাষ্ট্রপতি সেবা পদকপ্রাপ্ত মোহাম্মদ মোহন আলী আনুষ্ঠানিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন হাসপাতালের পরিচালক বরাবর।
অভিযোগে জানা যায়,গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিটের দিকে নিজ সন্তান দ্বারা গুরুতর আহত রোগী মাহমুদা (৪৫)-কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোগীর মাথা ও হাতে একাধিক আঘাত থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত জরুরি কিছু পরীক্ষার নির্দেশ দেন। কিন্তু পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় রক্তের নমুনা সংগ্রহে গাফিলতি ও অযথা বিলম্ব করতে থাকেন দায়িত্বে থাকা নার্স ও ব্রাদাররা।
এরই মধ্যে হাসপাতালের সিবিসি (CBC) টেস্টের সীমা পূর্ণ হয়ে যায়। রোগীর জরুরি অবস্থার কারণে মোহন আলী বাইরের অনুমোদিত ও মানসম্মত ক্লিনিকে পরীক্ষা করানোর প্রস্তাব দেন। চিকিৎসকও সে অনুমতি দেন। কিন্তু এ সময় তিনি যখন রক্তের নমুনা সংগ্রহের জন্য কর্তব্যরত নার্সদের বিনীতভাবে অনুরোধ করেন,তখনই শুরু হয় হয়রানি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে,সিনিয়র স্টাফ নার্স মোঃ সাইফুল ইসলাম ও আফরোজা প্রকাশ্যে মোহন আলীকে ‘বাইরের ক্লিনিকের দালাল’ বলে গালমন্দ করেন। শুধু তাই নয়,রোগীর নমুনা সংগ্রহে অস্বীকৃতি জানান এবং তাকে প্রকাশ্যে হুমকিও দেন।
“এসময় মোহন বলেছিলেন, প্রয়োজনে পরিচালক স্যারের কাছে অভিযোগ করব। তখন তারা প্রকাশ্যে ঔদ্ধত্যভরে বলেন, পরিচালক আমাদের কিছু করতে পারবে না, যা পারেন করেন।”
ভুক্তভোগী মোহন আলী জানান, পুরো ঘটনার ভিডিওচিত্র প্রমাণ হিসেবে তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
মোহন আলী শুধু একজন সাধারণ রোগীর স্বজন নন, তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে স্বেচ্ছায় প্রায় ১০ হাজার ব্যাগ রক্তদানসহ অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে আসছেন। রাষ্ট্রপতি সেবা পদকপ্রাপ্ত এ স্বেচ্ছাসেবকের প্রতি নার্সদের এমন অসৌজন্যমূলক আচরণে তিনি ক্ষুব্ধ ও অপমানিত বোধ করেছেন।
“এ ধরনের অশোভন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ শুধু মোহন আলীর সাথেই নয়, প্রায়শই সাধারণ রোগী ও স্বজনদের সাথেও ঘটে থাকে। এতে চিকিৎসা সেবার মান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং জনগণের আস্থা নষ্ট হচ্ছে।”
এ ঘটনায় তিনি অভিযুক্ত নার্স মোঃ সাইফুল ইসলাম ও আফরোজার বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে ভদ্র, মানবিক ও সহযোগিতামূলক আচরণ নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল পরিচালকের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধু এই অভিযোগই নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্স ও ব্রাদারদের অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং রোগী সেবায় অবহেলা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। সেবা পেতে গিয়ে অনেক রোগী ও স্বজন নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যদি এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্ব্যবহার চলতে থাকে, তবে এটি কেবল হাসপাতালের সুনামই ক্ষুণ্ণ করবে না, বরং স্বাস্থ্যসেবার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাও মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেবে।
এবিষয়ে অতি দ্রুত ব্যবস্হা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক শংকর কে বিশ্বাস। তিনি আরও বলেন আমরা এবিষয়ে অবগত হয়েছি এবং পরিচালক কঠর অবস্থানে আছেন।