রাজশাহী পুঠিয়ায় কৃষকরা খাদ্যশস্য হাটে নিয়ে এসে ৪ ধাপে লোকসান ও ভোগান্তির শিকার বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহত্তম বানেশ্বর ও ঝলমলিয়া হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটে প্রকাশ্যে ঢলন প্রথা চালু থাকায়। প্রত্যন্তঞ্চল হতে কৃষকরা হাটে খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি করতে এসে ওজন কারচুপি শিকার হচ্ছে। ৪০ কেজিতে মণ হিসাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার করার বিধান চালু থাকলেও হাটের পাইকারী ব্যবসায়ীরা নিয়ম অমান্য করে ৪২ কেজি মণ হিসাব পণ্য কিনছেন। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতি শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় জানায়, ক্ষেত হতে উৎপাদিত খাদ্যশস্য হাটে আনলে ব্যবসায়ীরা প্রতি মণে অতিরিক্ত ২ কেজি করে ওজন বেশি নিচ্ছেন।
অথচ তারা বিক্রি করার সময় ৪০ কেজি এক মণ ধরে পণ্য বিক্রি করছে। অপরদিকে চাষিরা হাটে খাদ্যশস্য নিয়ে আসলে আড়তদাদের কর্মচারীরা ওজন করার বাবদ মণ প্রতি ১০ হতে ১৫ টাকা করে কেটে নিচ্ছে। পন্যের ওজন ৪২ কেজি নেওয়ার পর কোনোক্রমে ৮শত গ্রামের পণ্য ওজন করার সময়ে বেঁচে যায়। সেই পণ্যে দাম আর দেওয়া হয় না। আবার পরিস্কার-পরিচ্ছন কর্মীরা ইচ্ছা মতো জোরপুর্বক কৃষকের নিকট হতে কয়েক কেজি খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন পন্য নিয়ে নিচ্ছে।
সোমবার ২৫ (আগষ্ট) ঝলমলিয়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো ব্যবসায়ীই কেজি দরে কেনাবেচা করছেন না। প্রত্যেকেই ৪২ কেজিকে মণ ধরে কিনছেন পেঁয়াজ-রসুন।
রসুন বিক্রেতা মোঃ মজনু বলেন: আমরা ভোগান্তির শিকার, অন্যা-অন্য বাজারে আমরা ৪১ কেজিতে মন বিক্রি করি, শুধুমাত্র ঝলমলিয়ার এই হাট ও বানেশ্বর হাটে ৪২ কেজিতে মন, মোল্লাপাড়া, মমিনপুর ও তাহেরপুর হাটে ৪১ কেজিতে মন, এখানে দেখাশোনা এক কেজি বেশি দিয়েই বিক্রি করি, কৃষকের সবখানেই লস।
ভাল্লুকগাছির এক রসুন বিক্রেতা পারভেজ বলেন: হাটে মাল বেচতে আসলে আমাদের খুবই খারাপ লাগে এজন্যই যে, মন প্রতি ঢলোন, তলা, প্রতি মনে কয়েলদারি, কেজি পূর্ণ হতে যদি ৫০গ্রাম ও শর্ট থাকে সেটাও ফ্রিতে নিয়ে নেয়।
আরেক চাষি আবুল কালাম আজাদ বলেন,
“৪২ কেজিতে মন, প্রতি বস্তায় ঢলনে ৮শ গ্রাম করে নিয়ে নেয়, তোলা হিসেবে নিয়ে নেই ১/২ কেজি, মন প্রতি কয়েল দারি ১০/১৫ টাকা, এভাবে দিতে আমাদের খুব জুলুম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু উপায় নাই।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন: ৪২ কেজিতে মন এই কারণেই নেওয়া হয় যা ছোট করে বিক্রি করার সময় আমাদের ঘার্তি পড়ে যায়, এটা না নিলে আমাদের পোষায় না। আরেক প্রশ্নের জবাব বলেন ৮শ গ্রাম ভাংতি হয়ে যায়, ওটা তো আর কেজিতে আসে না, যার কারণে নেওয়া হয়।
শস্য বিক্রয়ে চাষীদের চার ধাপের লস নিয়ে মুখ খুললেন ব্যবসায়ী আমজাদ: তিনি যুক্তি দেখিয়ে বলেন, “পেঁয়াজ-রসুন কাঁচামাল হওয়ায় ওজন কমে যায়, পচা-ফাটা বাদ দিতে হয়, তাতেই ঘাটতি হয়। সে কারণেই আমরা ৪২ কেজি মণ ধরি।” ৯০০ গ্রাম হলে আমরা বিবেচনা করি ৮শ গ্রাম হলে ৫০০ গ্রামের দাম দিয়ে থাকি। যার আড়োতে বা ঘরে কেনাবেচা হয় তাকে মন প্রতি ১০ টাকা কয়েলদারি দিতে হবে এটাই নিয়ম করা হয়েছে, তবে আমরা কিনার সময় চাষীদের দশ টাকা বেশি দিয়েই থাকি। তোলাটা নির্ধারণ করে দেওয়া নাই যার কারণে তোলা ইচ্ছামতো নিয়ে থাকে, একমাত্র হার্ট ইজারাদাররাই এটার প্রতিফলন ঘটাতে পারে
এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা একেএম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, আমি হাটের ঢলন প্রথা বিষয়টি জানি। আমের সময়ে এটা হয়ে থাকে। খাদ্যশস্যের কৃষকের ভোগান্তির ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না। তবে কৃষক পর্যায় হতে অভিযোগ আসলে আমরা যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে কেজি দরে কেনাবেচা নিশ্চিত করা না হলে ‘ঢলন প্রথা’র কারণে তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। তারা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন সাধারণ ভুক্তভোগীরা।