চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় দিশেহারা দুই সহস্রাধিক চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য বছরের পর বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতা এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে এই সদস্যরা কর্মস্থলে পুনর্বহাল হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। সামান্য কারণে বিভাগীয় মামলা, বেআইনি আদেশ না শোনা, ডোপ টেস্টের নামের ফাঁদ, ছুটি না দেওয়ায় তর্ক করাসহ নানা কারণে গত ১৫ বছরে চাকরিচ্যুত হয়েছেন এসব পুলিশ সদস্যরা।
বিগত সরকার আমলে স্বৈরাচারী নীতির শিকার হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়ে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন প্রায় দুই হাজার পুলিশ সদস্য। তাদের অনেকেই আজ দারিদ্র্যের কষাঘাতে অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন। কেউ সিএনজি চালাচ্ছেন, কেউ রিকশা টানছেন, কেউবা পণ্য ফেরি করছেন। অনেকের চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের সাথে আলাপকালে তারা জনান, সম্প্রতি চট্টগ্রামে সিএনজি চালানোর সময় স্ট্রোক করে প্রাণ হারান চাকরিচ্যুত এএসআই মিজান।
তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই করুণ যে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যও ছিল না। সহকর্মীদের তোলা চাঁদার টাকায় শেষ পর্যন্ত তার দাফন সম্পন্ন হয়। একইভাবে খুলনার একটি হাসপাতালে মরণব্যাধি ক্যান্সারে ভুগছেন কনস্টেবল তরিকুল ইসলাম, কিন্তু টাকার অভাবে তার সুচিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। এসআই আমিনুল ইসলাম, যিনি স্ট্রোকজনিত কারণে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত, চিকিৎসার খরচ চালাতে না পেরে বাড়িতে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। চাকরি হারিয়ে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন ডিএমপির সাবেক কনস্টেবল রাশিদুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী সদস্যরা জানান, পুলিশের চাকরি থেকে বরখাস্ত হলে তাদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে অন্য কোনো পেশায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। তারা আরো বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের নির্দেশে ভুক্তভোগী সদস্যরা পুনর্বহালের আবেদন করেন। পুলিশের ডিআইজি ডঃ শোয়েব রিয়াজ আলম, আইন শাখার কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলাজজ মুর্শিদ আহমেদ এর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি সর্বশেষ ১,৫২২ জনের একটি তালিকা করে এবং বাকীদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলমান ছিল।
যেই সময়ে এসব চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদেরকে চাকরিতে পুনর্বহালের একটা প্রক্রিয়া চলমান ছিল সেই সময়ে পুলিশের আইজিপি পর্যায়ে রদবদল হওয়ায় কাজে ঢিলেঢালা ভাব আসে। যার কারণে এই প্রক্রিয়াটি এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। যার কারণে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা আরো বেশী অসহায়ত্ব বোধ করছে। এছাড়াও তাদের পক্ষে আদালত থেকে চাকরিতে পুনর্বহালের রায়ও এসেছে। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে রায় কার্যকর না হওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ এখনো অন্ধকারে।
এদিকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং দীর্ঘসূত্রতা চাকরিচ্যুত সদস্যদের দুঃখ-কষ্ট আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অনেকে আর্থিক অনটনে মামলা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যও হারিয়েছেন। চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা রাষ্ট্র ও প্রশাসনের কাছে তাদের পুনর্বহালের আবেদন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন, প্রশাসন তাদের দুঃসহ জীবনের কষ্ট লাঘব করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই অসহায় মানুষদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা এবং তাদের প্রতি সুবিচার করা। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান অত্যন্ত জরুরি
এবং পুলিশের বর্তমান ভঙ্গুর মনোবল বাড়ানোর জন্য চাকরিচ্যুত সকল পুলিশ সদস্যদের ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।