সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনে নৌকা পেয়েছেন মণ্ডল গ্রুপের কর্ণধার এমপি আবদুল মমিন মণ্ডল। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে আবেদন করেও বঞ্চিত হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতি। তাঁর সঙ্গে বিভেদ ছিল বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামাতা নুরুল ইসলাম সাজেদুল ও তাঁর ভাই উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজার। বিভেদ ভুলে তাঁরা আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে সমর্থন জানাতে একাট্টা হয়েছেন। এতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আব্দুল মমিন মণ্ডল। সম্প্রতি নুরুল ইসলাম সাজেদুল ও মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজার বাসায় নৈশভোজে যোগ দেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস। এ সময় তারা একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে লতিফ বিশ্বাসের প্রতি সমর্থন জানান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন লতিফ বিশ্বাস। একই সঙ্গে জামাতা নুরুল ইসলাম সাজেদুলও মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও শেষ পর্যন্ত বাছাইয়ে বাদ পড়েন জামাতা সাজেদুল। ১ শতাংশ ভোটার তালিকায় গরমিলের কারণে বাদ পড়লেও ইসি বরাবর আপিল করেন। পরে শ্বশুরের পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, লতিফ বিশ্বাসের জামাতা সাজেদুলের সহোদর উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা বেলকুচির প্রভাবশালী মেয়র। তাঁর বিশাল কর্মী-সমর্থক বাহিনী রয়েছে। বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দুই ভাইয়ের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস ও তাঁর পরিবারে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল ছিল। যে কারণে প্রয়াত এমপি আবদুল মজিদ মণ্ডল ও তাঁর ছেলে বর্তমান এমপি মমিন মণ্ডলের সমর্থনে কাজ করেছেন সাজেদুল ও রেজা। পরবর্তী সময়ে এমপি মমিনের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হলেও লতিফ বিশ্বাসের সঙ্গে দূরত্ব কমেনি। বিরোধের জেরে একই আসনে জামাতা সাজেদুল তৃণমূলের সিদ্ধান্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এরপর তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন করে দানা বাঁধে। তাদের একত্র করতে উদ্যোগী হন নুরুল ইসলাম সাজেদুলের শাশুড়ি বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আশানুর বিশ্বাস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী এবং তাঁর সহধর্মিণী রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান বেগম সোনিয়া সবুর। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শ্বশুর-জামাতা একাট্টা হন। এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানুর বিশ্বাস বলেন, ‘নুরুল ইসলাম সাজেদুলের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর সে আপিলের ঘোষণা দেয়। পরে আর আপিল করেনি। শ্বশুরের নির্বাচনী প্রচারে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে চোষে বেড়াচ্ছেন সাজেদুল। ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন ও ৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি বলেন আগের তুলনায় উন্নয়ন অনেক কম হয়েছে। এটা আমাদের চাওয়ার ব্যর্থতা নাকি এমপি সাহেবের আনার ব্যর্থতা সে বিষয়ে বলতে পারছি না। লতিফ বিশ্বাস এমপি ছিলেন তখন ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। গত দুই দফায় পুরোই উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছি আমরা। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেন, প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও একটি মিনি স্টেডিয়াম বেলকুচিতে হয় নাই। মমিন মণ্ডল নির্বাচনে আসার আগে বলেছিলেন, নিজের খরচায় এই এলাকার রাস্তাঘাট করে দেবেন, বেলকুচির অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করবেন। ওনার বাবাও তাই বলেছিলেন। কিন্তু একটা উন্নয়ন নিজের অর্থে করেন নাই। বরং সরকারি অর্থ এনে এখানে উন্নয়ন করার সময়ও উনারা দেন নাই। গত নির্বাচনের আগে একটি জনসভায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাসিমের উপস্থিতিতে বেলকুচিতে গার্মেন্টস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর এব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেননি। বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা বলেন, ‘গত দুটি সংসদ নির্বাচনে আমরা আবদুল মমিন মণ্ডল ও তাঁর বাবা আবদুল মজিদ মণ্ডলকে এমপি বানিয়েছি। ১০ বছরেও তারা এলাকায় উন্নয়ন করেননি। এ কারণে আমরা বেলকুচি-চৌহালীর উন্নয়নের স্বার্থে সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাসকে সমর্থন দিয়েছি।’