২০১৯ সালে ইউনেস্কো সারা বিশ্বের গণিতবিদদের জন্য ১৪ মার্চ অর্থাৎ ‘পাই দিবস’কে আন্তর্জাতিক গণিত দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত দেয়। আন্তর্জাতিক গণিত সংস্থা প্রদত্ত এবছরের গণিত দিবসের থিম ‘গণিতের সাথে খেলা’। এযাবৎকালের পাঁচটি দিবসের আলাদা থিমের বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের ক্ষুদে গণিতবিদরা এবং তা তুলে ধরেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যম কর্মী আফসানা মিমিঃ
“গণিত সর্বত্র”
আন্তর্জাতিক গণিত সংস্থা প্রথম ২০২০ সালে যে থিমটি নিয়ে কাজ করেছিল সেটি হচ্ছে ‘গণিত সর্বত্র’। সব পরিসরে এবং সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজে গণিতের ব্যবহার অপরিহার্য। গণিত যদিও সংখ্যার ভাষা কিন্তু এটি সংখ্যার ভাষা হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন কার্যক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন, কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং, ডাটা স্ট্রাকচার এবং অ্যালগরিদম ইত্যাদির ভিত্তিই হলো গণিত। একটি দেশ কতটা শক্তিশালী এবং কতটা দুর্বল তা নির্ভর করে অর্থনীতির উপর আবার এই অর্থনীতিই গণিতের উপর নির্ভর করে ফলাফল দিয়ে থাকে। এছাড়া আরো অনেক ক্ষেত্রে গণিতের ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেমন, শিক্ষাঙ্গনে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ব্যবসায়িক, ব্যাংক ও বীমা, আবহাওয়া এবং ভূগোল ইত্যাদি। এছাড়াও বিশ্বের যে কোন কাজ করতে গেলে গণিতের ব্যবহার অবশ্যই করতে হয়। তাই বলা যায় গণিত সর্বত্র সর্বক্ষণ।
বিপ্লব চন্দ্র বর্মন
শিক্ষা বর্ষ ২০১৯-২০
“একটি উন্নত বিশ্বের জন্য গণিত”
আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জেনে বা না জেনে গণিতের দ্বারস্থ হচ্ছি। গণিতশাস্ত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লানিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বকে পরির্বতন করে দিচ্ছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সহজ করে দিয়েছে স্মার্টফোন । এই স্মার্টফোনের সফটওয়্যারের পেছনেও রয়েছে গণিতের অবদান। পরিবহন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে অপটিমাইজ করতে গণিতশাস্ত্র ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ও গণিতের বড় অবদান রয়েছে। যেমনঃ সিটি স্ক্যান, এমআরআইয়ের মতো মেডিকেল ইমেজিং ডিভাইস গাণিতিক অ্যালগরিদমের মাধ্যমে সংখ্যাসূচক তথ্য থেকে ইমেজ তৈরি করে।মানব জিনোমের ডিকোডিং হলো গণিত। গণিতশাস্ত্রের মাধ্যমে আমরা আবহাওয়া আগাম বার্তা জানতে পারি। এতে আমরা ঝুঁকি অনুধাবন এবং আগাম প্রস্তুতি নিতে পারি।
ইসরাত জাহান ঊর্মি
শিক্ষা বর্ষ ২০২৩-২৪
“গণিত একত্রিত করে”
আমাদের চারপাশে যা কিছু নান্দনিক এর অন্তরালে লুকিয়ে আছে তা হলো গাণিতিক যুক্তির সঠিক প্রয়োগ। প্রকৃতির সকল পর্যবেক্ষণ এক বিশাল ডেটা সেটকে নির্দেশ করে। এই প্রায় অসীম ডেটা সেটকে সংক্ষেপে কিছু বিমূর্ত প্রতীক ও চিহ্নের সাহায্যে কিছু শৃঙ্খলে বেধে একত্রিত করাই গণিতের কাজ। আর এমনই একটি থিম ছিল ২০২২ সালে যার নামকরণ ‘গণিত একত্রিত করে’। আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং মেডিক্যাল ইত্যাদি প্রত্যক্ষভাবে গণিতের উপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের জীবনকে সামগ্রিকভাবে একবিন্দুতে মিলিয়ে দেয় গণিত। তাই গণিতকে বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয়। জীবনের সকল হিসেব-নিকাশ করার মাধ্যমে জীবনের সকল বিষয়কে একসাথে উপস্থাপন করা যায় গণিতের সাহায্যে।
পীযুষ চন্দ্র রায়
শিক্ষা বর্ষ ২০২৩-২৪
“সবার জন্য গণিত”
গণিত সবার জন্যই হওয়া উচিৎ, এমন একটি থিম নিয়ে আন্তর্জাতিক গণিত সংস্থা কাজ করেছিল ২০২৩ সালে যার নাম দেওয়া হয় ‘সবার জন্য গণিত’। কারণ, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই বিভিন্ন মাত্রার স্বাভাবিক কিছু গাণিতিক ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমতা ব্যক্তি ভেদে একেক জনের একেক রকম। তারপরও আমাদের সবাইকে অবশ্যই গণিতের মূলবিষয় বস্তু বুঝতে হবে।গণিত বিষয়টি শুধু যে প্রতিভাধর এবং প্রতিভাবানদের জন্য এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ক্রমান্বয়ে বর্তমান সভ্যতা Computer -ভিত্তিক Artificial Intelligence (AI) এর উপর নির্ভর হয়ে যাচ্ছে, যাতে অন্যতম চালিকাশক্তি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে গণিত। মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প, বানিজ্য এবং অর্থনীতিসহ জীবনের সব স্তরের সব সমস্যা AI দিয়ে সমাধান করতে যাচ্ছে, যাতে গণিতই থাকছে একমাত্র ভাষাগত মাধ্যম। তাই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে গণিত ছাড়া বর্তমান সভ্যতা অসম্ভব।
সারফুন নাহার স্বর্ণা
শিক্ষা বর্ষ ২০২৩-২৪
“গণিতের সাথে খেলা”
আমি মনে করি, সৃষ্টির আদিতেই গণিতের অবস্থান। গণিতের একটা ইকুয়েশনে ত্রুটি দেখা দিলে, মহাবিশ্ব ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। আমরা যারা গণিতে স্নাতক অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষের চোখে আমরা শুধু খাতা-কলমে অংক সমাধানে সীমাবদ্ধ। মূলত, এই সমাধানই, মহাবিশ্বের জন্য নতুন একটি আবিস্কার।
‘ডাইমেনশন’ গণিতের একটি ম্যাজিক্যাল ইনভেনশান। ১ম,২য়,৩য়,৪র্থ…..শেষতম ডাইমেনশন, যা মানুষের সাইকোলজিকে নিয়ে খেলছে বর্তমান সময়ে। আমরা ৩য় ডাইমেনশনের বাসিন্দারা চাইলেই কি ৪র্থ ডাইমেনশনে ‘টাইম ট্রাভেল’ করতে পারি? চলে যেতে পারি, ভবিষ্যতের কোন সময়ে বা অতিতে? শেষ ডাইমেনশনে কারা বাস করে?
সব প্রশ্নের সহজ উত্তর গণিত। গণিতকে জানো, গণিতের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোল। গণিতকে নিয়ে খেলো। গণিতকে নিয়ে খেলতে খেলতেই একদিন মহাবিশ্বের দ্বার উন্মোচিত হবে। আর তাই তো আন্তর্জাতিক গণিত সংস্থা এ বছরে যে থিমটি নিয়ে কাজ করছে সেটি হলো ‘গণিতের সাথে খেলা’।
তবুও, প্রশ্ন থেকেই যায়, ‘গণিত মহাবিশ্বকে নিয়ে খেলা করছে নাকি মহাবিশ্ব গণিতকে নিয়ে খেলা করছে’?
অমি রাণী সাহা
শিক্ষা বর্ষ ২০২০-২১